সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় ২০২৫
আপনি কি সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ আজকের পোস্টের মধ্যে সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় বা কিভাবে লোন নিবেন বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঋণ প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরণের লোন স্কিম অফার করে। ঋণ গ্রহনের পূর্বে ঋণের শর্তাবলী ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সোনালী ব্যাংকে লোন নেওয়ার উপায় ও লোন নিতে কি কি কাগজ লাগে।
পোস্ট সূচিপত্র.
সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার নিয়ম
সোনালী ব্যাংক লোন পাওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যেতে হবে। এরপর, উক্ত শাখায় কর্মরত কাউকে জানাতে হবে যে আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান। তাহলে, তারা বেশ কিছু প্রশ্ন করবে। যেমন,
আপনি কোন কাজের জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন, কী ধরণের লোন নিতে চাচ্ছেন, কত টাকা লোন নিতে চাচ্ছেন এবং আপনার পেশা কী ইত্যাদি সহ বেশ কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পর তারা আপনাকে লোনের একটি আবেদন ফরম দিবে।
লোনের আবেদন ফরমটিতে চাওয়া সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। আপনার ভোটার আইডি কার্ডে থাকা তথ্য অনুযায়ী সোনালী ব্যাংকের লোন আবেদন ফরমটি পূরণ করবেন। অথবা, ব্যাংকে কর্মরত কারো থেকে লোনের আবেদন ফরমটি পূরণ করে নিতে পারেন।
এরপর, লোনের ফরম জমা দেয়ার সময় উপরে উল্লেখ করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে। ব্যাংকে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই নিচে উল্লেখিত ডকুমেন্ট গুলো সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এরপর, লোনের আবেদন ফরম জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার লোনের আবেদন অনুমোদন হলে কল দিয়ে বা এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর, আপনি সোনালী ব্যাংকের উক্ত শাখায় গিয়ে লোনের টাকা তুলে নিয়ে আসতে পারবেন। এভাবে, সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
তবে, লোনের ধরনের উপর নির্ভর করে লোনের পরিমাণ, কী কী ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে তা এবং লোনের মেয়াদ ও কিস্তির পরিমাণ কত হবে তা পরিবর্তন হতে পারে। সোনালী ব্যাংক থেকে যেসব লোন দেয়া হয় সেগুলো নিয়ে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক লোন পেতে কি কি লাগে
সোনালী ব্যাংক একটি সরকারি ব্যাংক। এই ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত কাজের জন্য বা ব্যবসায়ীক কাজের জন্য লোন দেয়া হয়। সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরণের লোন দেয়া হয়। জামানত সহ লোন এবং জামানত ছাড়া লোন দেয়া হয়।
সোনালী ব্যাংক থেকে লোন পেতে কী কী লাগবে তা নিচে একটি তালিকা আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে এসব কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে যাবেন। এরপর, নিচে উল্লিখিত নিয়ম অনুসরণ করলে ঋণ নিতে পারবেন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) /পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি।
- সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নমিনির ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
- নমিনির সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য ইনস্ট্যান্ট ডিপোজিট এর টাকা।
- আয়ের প্রমাণ হিসাবে বেতন সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট অথবা আয়কর রিটার্ন।
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার।
- ঠিকানা যাচাই করার জন ইউটিলিটি বিলের কপি যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন বিল, স্থানীয় সরকারের করের রশিদ।
- লোনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে জামানত লাগতে পারে।
সোনালী ব্যাংক লোনের ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত কাগজপত্র
সোনালী ব্যাংক হোম লোন, পার্সোনাল লোন, সরকারি চাকুরীজীবীদের জন্য লোন সহ বিভিন্ন ধরনের লোন দিয়ে থাকে।
- পার্সোনাল লোন : ব্যবসায়িক পরিকল্পনা (SME ঋণের জন্য)।
- হোম লোন : সম্পত্তির মালিকানার প্রমাণপত্র, নকশা, অনুমোদন/খতিরনামা।
- গাড়ি লোন : গাড়ির ইনভয়েস, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, বীমা সনদ।
- শিক্ষা লোন : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তি/ফি জমা দেওয়ার প্রমাণপত্র।
- সরকারি চাকুরীজীবীদের লোন: আপনি যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তার প্রমাণপত্র।
উপরোক্ত ডকুমেন্ট গুলো সংগ্রহ করে সাথে রাখতে হবে। এরপর, যখন সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে যাবেন, তখন এসব ডকুমেন্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে। লোনের ফরম পূরণ করার পর ফরমের সাথে এসব ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
সোনালী ব্যাংক পার্সোনাল লোন
সোনালী ব্যাংক মূলত ব্যক্তিগত কাজের জন্য পার্সোনাল লোন প্রদান করে থাকে। এ ব্যাংক ৫০,০০০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন দিচ্ছে। কিন্তু ইনকাম অনুযায়ী আপনার সঠিক যোগ্যতা থাকতে হবে। তাহলেই আপনি এই সুবিধাটি উপভোগ করতে পারবেন। সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ
সোনালী ব্যাংক সরকারি চাকুরীজীবীদের লোন
সোনালী ব্যাংক ব্যাংক সরকারি চাকরীজীবীদের সুবিধার জন্য মূলত সরকারি চাকুরীজীবীদের লোন প্রদান করে থাকে। এ ব্যাংক স্যালারি লোন সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। আবার পরিশোধের সময়সীমা সর্বোচ্চ ৫ বছর, এবং এর জন্য কোনও জামানতের প্রয়োজন হয় না। যে সকল সরকারি চাকরীজীবী চাকরির বয়স ১ বছর এমন ব্যক্তি স্যালারি লোন নিতে পারবে।
সোনালী ব্যাংক হোম লোন
আপনাদের মধ্যে অনেকেরি ইচ্ছা থাকে সুন্দর ভাবে একটি বাড়ি বানানোর। কিন্তু টাকার বা আর্থিক সমস্যার কারণে স্বপ্নের বাড়ি বানানোর ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না। তবে সোনালী ব্যাংক হোম লোনের কারণে আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন। কারণ সোনালী ব্যাংক বাড়ি বানানোর উপর ভিত্তি করে হোম লোন প্রদান করে থাকে।
সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হোম লোন প্রদান করে থাকে। আর সোনালী ব্যাংকে হোম লোনের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট কম ৯ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করতে হয়। এছাড়াও সোনালী ব্যাংকের হোম লোন পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ২০ বছর প্রদান করে থাকে।
সোনালী ব্যাংক শিক্ষা লোন
সোনালী ব্যাংক শিক্ষা লোন মুলত উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রদান করা হয়ে থাকে। সোনালী ব্যাংকের শিক্ষা লোন প্রদান করার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও সচ্ছল করে স্বাবলম্বী হিসাবে গরে তোলা। সহজভাবে বলতে শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান করার জন্য শিক্ষা লোন প্রদান করা হয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট
সোনালী ব্যাংক থেকে যারা লোন নেওয়ার সিধান্ত নিচ্ছেন তাদের প্রত্যেকের জেনে নিতে হবে সোনালী ব্যাং লোন ইন্টারেস্ট রোট সম্পর্কে। ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট সবসময় একই থাকে না। বিভিন্ন কারনে ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তনশীল হয়ে থাকে। তাই কোনো ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার পূর্বে জেনে নিতে হবে বর্তমান ব্যাংকের লোন ইন্টারেস্ট রেট কত রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের লোন ইন্টারেস্ট রেট অনেক সময় পরিবর্তনশীল করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কতৃক দেশের ব্যাংক গুলোর সুদনীতি পরিবর্তনশীল করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সোনালী ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লোন ইন্টারেস্ট রেট কত ?
সোনালী ব্যাংকের লোনের ইন্টারেস্ট রেট ন্যূনতম ৯ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে লোনের মেয়াদ ও লোনের টাকার উপর নির্ভর করে ইন্টারেস্ট রেট কম বেশি হয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংক লোন ক্যালকুলেটর
সোনালী ব্যাংক থেকে আপনি যদি লোন নিয়ে থাকেন তাহলে ইএমাই’ ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি আপনার মাসিক কিস্তির হিসাব বের করতে পারবেন। কারণ ইএমাই’ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করেই আপনি বুঝে নিতে পারবেন প্রতি কিস্তিতে আপনার কত টাকা দিতে হবে।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ইএমআই ক্যালকুলেটরের সাহায্যে কি ভাবে মাসিক কিস্তির হিসাব বের করবেন-
EMI ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার সময়, Loan Amount, Repayment in months, Interest Rate এসব তথ্য চাইবে। আপনি সঠিক ভাবে Loan Amount এর ঘরে মোট ঋনের পরিমাণ, Repayment in months এর ঘরে কত মাসে আপনি লোন পরিশোধ করবেন সে তথ্য দিবেন এবং Interest Rate এর ঘরে সুদের হার বসাবেন। এসব তথ্য দিয়েই আপনি ইএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে মাসিক কিস্তি বের করে নিতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক লোন সুবিধা
সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক, যা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক এবং কর্পোরেট সেবা প্রদান করে। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। আপনি যদি সোনালী ব্যাংক নিতে চান তাহলে আপনার জানা প্রয়োজন কি কি সুবিধা দিয়ে থাকে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক সোনালী ব্যাংক কি কি লোন সুবিধা দিয়ে থাকে-
- সোনালী ব্যাংক থেকে আপনারা যারা লোন নিবেন, তাদের মূলত অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় সুদ কম দিতে হয়। ৯ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ১৪ শতাংশ ।
- সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য কঠিন কোন শর্ত পূরণ করা লাগেনা, সহজ শর্তে লোন পাওয়া যায়।
- সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের ৫০,০০০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে।
- সোনালী ব্যাংক লোন সম্পর্কিত কোন ধরনের সমস্যাই পড়লে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
- সোনালী ব্যাংক মূলত ডিজিটাল ভাবে গ্রাহকদের লোন বা সেবা প্রদান করে থাকেন। যার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন নেওয়ার জন্য সকল গ্রাহক আবেদন করতে পারে।
- সোনালী ব্যাংক থেকে লোন প্রদান করার পর তারা লোন পরিশোধ করার জন্য ১২ মাস থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত সময় প্রদান করে থাকে।
সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায়-শেষ কথা
আজকের আলোচনার মুখ্য বিষয় সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে সাথে আরও আলোচনার করেছি সোনালী ব্যাংক লোন নিতে কি কি কাগজপত্র লাগে। আশা করি এই পোস্ট থেকে আপনি বুঝতে পেরেছেন সোনালী ব্যাংক লোন নেওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
এমন নিত্য নতুন তথ্য জানতে অবশ্যই আমাদের ওয়েব সাইটটি ফলো করুন। এই পোস্ট থেকে আপনার মতামত অবশ্য কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url