সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক
আপনারা অনেকেই আছেন যারা নিজের ব্যবসা বা নতুন বাড়ি নির্মাণ করার জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাচ্ছেন? বা জানতে চাচ্ছেন বাংলাদেশে কোন ব্যাংক গুলো সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয়। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক গুলো, কত টাকা এককালীন লোন দেয় এবং সুদের হার কত?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজন মেটাতে লোনের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু লোন গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদের হার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন শর্তে কম সুদের ঋণ অফার করে বা সুদে লোন প্রদান করে থাকে।
যেমন ব্যক্তিগত ঋণ, ব্যবসা ঋণ, গৃহঋণ ইত্যাদি।আপনারা অনেকেই আছেন যারা কম সুদের লোন খোঁজেন যাতে ঋণ পরিশোধের সময় চাপ কম হয়। তাই ব্যাংক গুলো গ্রাহকের প্রয়োজন ঋণের ধরণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর ভিত্তি করে সুদের হার নির্ধারণ করে। তবে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সুদের হারের কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক
বর্তমান সময়ে ব্যাংক ঋণে সুদের হার কম হওয়া ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫৭টি তফসিলি ব্যাংক এর মধ্যে ৩৭টি ব্যাংকের ঋণের সুদহার কম অর্থাৎ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। যার মধ্যে ১০ ব্যাংকের ঋণের সুদহার ৮ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মে শেষে ঋণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর গড় সুদহার ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সুদ নিচ্ছে বিদেশি ব্যাংক। ঋণের ক্ষেত্রে বিদেশি ব্যাংক গুলোর গড় সুদহার ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের সুদহার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
ঋণের গ্রহনের ক্ষেত্রে ৮ শতাংশের নিচে সুদ নেওয়া ব্যাংক গুলো হলো- রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। বিদেশি হাবিব ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ওয়ারি ব্যাংক, এইসএসবিসি এবং ব্যাংক আলফালাহ লিমিটেড। এছাড়া বেসরকারি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত, বিশেষায়িত এবং বিদেশি ব্যাংক গুলো কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। তবে ১০ বা ১০ শতাংশের নিচে ঋণ দিচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবং যমুনা ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক , কৃষি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, বিসিবিএল, ।
বাংলাদেশে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক
বাংলাদেশে কম সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যাংক গুলো সাধারণত জনসাধারণের আর্থিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে। ব্যাংক গুলো কম সুদে ঋণ দেয়ার প্রধান কারণ হলো সাধারণ মানুষ ও ছোট ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করা। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীয় ভাবে সুদের হার নির্ধারণ করে। তবে প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুসারে সুদের হার কিছুটা পরিবর্তন করতে পারে।
যেসব ব্যাংক কম সুদে ঋণ প্রদান করে, তাদের লক্ষ্য হলো গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা এবং ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত করা। এই ব্যাংক গুলো মূলত গৃহঋণ, ব্যক্তিগত ঋণ, ব্যবসায়িক ঋণ এবং শিক্ষাঋণ প্রভৃতি সেবা প্রদান করে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় এমন ১০টি ব্যাংকের নাম নিচে উল্লেখ করা হয়েছে -
- এবি ব্যাংক
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- বেসিক ব্যাংক
- ব্র্যাক ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- সোনালী ব্যাংক
- জনতা ব্যাংক
- পূবালী ব্যাংক
- রূপালী ব্যাংক
- কৃষি ব্যাংক
এবি ব্যাংক (AB Bank)
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যাংক হলো এবি ব্যাংক (AB Bank)। কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সুদে লোন দেওয়া ব্যাংক গুলোর তালিকায় এক নাম্বরে রয়েছে এবি ব্যাংক লিমিটেড।
মূলত এবি ব্যাংক শতকরা ৭.৪৩% সুদে পার্সোনাল লোন প্রদান করে থাকে। (ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তন যোগ্য)। যারা নিজের পার্সোনাল কাজে লোন (Loan) নিতে চান তারা এবি ব্যাংক (AB Bank) থেকে লোন নিতে পারবেন।
কম সুদে পার্সোনাল লোন নিতে চান যারা তাদের এবি ব্যাংকের যে কোনো শাখায় যোগাযোগ করে লোন নিতে হবে। পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে এবি ব্যাংক।কিন্তু লোন গ্রহনের জন্য উপযুক্ত একটি কারণ দেখাতে হবে আপনাকে। আর লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৫ বছর বা ৬০ মাস।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক (Dutch-Bangla Bank)
ডাচ বাংলা ব্যাংকে লোনের পরিমাণ অনুযায়ী সুদের হার নির্ধারণ করে থাকে। এক্ষেত্রে পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৮% পর্যন্ত হয়ে থাকে। আবার শিক্ষা লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার তুলনা মূলক ভাবে একটু কম হয়ে থাকে। তবে সুদের হার মূলত নির্ধারিত হয় সময় ও অর্থের ওপর।
গ্রাহক কত দিনের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করবে এটি লোনের ক্ষেত্রে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সুদের হার কত হবে এক নির্ধারণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এক্ষেত্রে লোনের সর্বোচ্চ সুদের ১০% থেকে ১২ শতাংশ হতে পারে। তবে সুদের হার হ্যাঁ পরিবর্তনশীল সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।
বেসিক ব্যাংক (Basic Bank)
মূলত বেসিক ব্যাংক সুদের হার বার্ষিক ০৯.০০% (ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তনযোগ্য)।ঋণ সুবিধার সীমা ২৫ হাজার থেকে - ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। তবে ঋণ পরিশোধের সময়কাল এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ বৎসর ও Cash Credit এর ক্ষেত্রে ১ বৎসর (নবায়ন যোগ্য)।
আপনারা যারা কম সুদে লোন নিতে চাচ্ছেন তারা কম সুদে বেসিক ব্যাংক (Basic Bank) থেকে লোন নিতে পারেন। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা নতুন বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না তারা বেসিক ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে লোন আবেদন করতে পারবেন।
ব্র্যাক ব্যাংক (BRAC Bank)
মূলত ৯% হারে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পার্সোনাল লোন দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক। লোন নেওয়ার জন্য আপনি কি কাছের জন্য লোন নিচ্ছেন সেই বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জমা দিতে হবে। ব্র্যাক ব্যাংক ৯% সুদে গ্রাহকদের লোন প্রদান করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের মতো লোন প্রসেসিং ফি ২% নিয়ে থাকে।
সিটি ব্যাংক (City Bank)
সিটি ব্যাংকে লোনের সুদের হার বিভিন্ন ধরণের লোন ও সেবার উপর নির্ভর করে এবং এটি বাজারের অবস্থার সঙ্গে পরিবর্তনশীল। সাধারণত, ব্যাংকটি ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত উভয় ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে।
আবাসন, ভোক্তা, কৃষি, এবং ব্যবসায়িক ঋণের জন্য সুদের হার বিভিন্ন রকম হয়। গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার হবে ৯ শতাংশ। তবে সাত দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দিলে গ্রাহককে কোনো সুদ গুনতে হবে না।(ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তনযোগ্য)।
সোনালী ব্যাংক (Sonali Bank)
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি ব্যাংক হলো সোনালী ব্যাংক।কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সুদে লোন প্রদান করা ব্যাংক গুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একটি।
মূলত সোনালী ব্যাংক শতকরা ৩ বছরের জন্য ৯.০০% সরল হারে ও ৫ বছরের জন্য ১০.০০% সরল হারে লোন প্রদান করে থাকে।(ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তন যোগ্য)। যারা নিজের পার্সোনাল কাজে লোন (Loan) নিতে চান তারা সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
জনতা ব্যাংক (Janata Bank)
জনতা ব্যাংকের লোন সুদের হার বিভিন্ন ধরনের ঋণের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, ব্যক্তিগত এবং গৃহঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার ৯.০০%, চক্রবৃদ্ধি হারে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আরোপযোগ্য(সুদ হার পরিবর্তনশীল)।
তবে ব্যবসায়িক ও কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি হতে পারে। ব্যাংকটি সাধারণ গ্রাহক এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগ গুলোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা প্রদান করে। যেখানে ঋণের শর্ত এবং গ্যারান্টারের বিষয় গুলো সুদের হারের ওপর প্রভাব ফেলে।
আপনার নির্দিষ্ট চাহিদার ভিত্তিতে সুদের হার সম্পর্কে আরও বেশি বিস্তারিত তথ্য জানতে ব্যাংকের যে কোন শাখায় সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
পূবালী ব্যাংক (Pubali Bank)
পূবালী ব্যাংকে লোনের সুদের হার বিভিন্ন ধরণের লোন ও সেবার উপর নির্ভর করে এবং এটি বাজারের অবস্থার সঙ্গে পরিবর্তনশীল। সাধারণত, ব্যাংকটি ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত উভয় ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। আবাসন, ভোক্তা, কৃষি, এবং ব্যবসায়িক ঋণের জন্য সুদের হার বিভিন্ন রকম হয়। তবে সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে আবাসন লোন প্রদান করা হয় সুদের হার বার্ষিক ০৯.০০% (ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তনযোগ্য)।
রূপালী ব্যাংক (Rupali Bank)
রূপালী ব্যাংকের লোন সুদের হার বিভিন্ন ধরণের ঋণের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। সাধারণ ঋণ যেমন বাণিজ্যিক ঋণ বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (SME) ঋণের জন্য সুদের হার বার্ষিক ০৯.০০% (ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তনযোগ্য)।। তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য SME ঋণে বিশেষ সুবিধা হিসেবে সুদের হার ০৯.০০%রাখা হয়েছে।
কৃষি ব্যাংক (Krishi Bank)
লোণের সুদের হার বিভিন্ন ধরণের লোন ও সেবার উপর নির্ভর করে, এবং এটি বাজারের অবস্থার সঙ্গে পরিবর্তনশীল। সাধারণত, কৃষি ব্যাংক ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত উভয় ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে।যেমন কৃষি, আবাসন, ভোক্তা, এবং ব্যবসায়িক ঋণ। আর এসব ঋণের জন্য সুদের হার বিভিন্ন রকমের হয়ে।মূলত লোন প্রদানে সুদের হার বার্ষিক ০৯.০০% (ব্যাংকের বিবেচনায় সময়ে সময়ে পরিবর্তনযোগ্য)।
সবচেয়ে কম সুদে লোন দেয় কোন ব্যাংক-শেষ কথা
আপনাদের মধ্যে যারা কম সুদে ব্যাংক থেকে লোন নিতে চান তারা এবি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের (জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক,কৃষি ব্যাংক ) থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম সুদে লোন নিতে পারবেন।আর এই সম্পর্কে কোন প্রশ্ন যদি আপনাদের জানার থাকে তাহলে নিচের কমেন্টে লিখে জানাবেন এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url