সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আজকের আলোচনার বিষয় সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ কি?তা নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ সঠিক ভাবে জানতে চাইলে নিচের তথ্য গুলো আপনার জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তো চলুন দেরি না করে দেখে নেই, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত (আয়াত ২২-২৪) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।কারণ এ আয়াত গুলোতে আল্লাহ তায়ালার মহান গুণাবলী এবং সৃষ্টিজগতের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ, এবং মানবজাতির প্রতি তাঁর দয়া ও করুণার গুরুত্ব প্রকাশ করে।এছাড়াও এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর ৯৯টি নামের কিছু গুণবাচক নাম তুলে ধরা হয়েছে, যে গুলো তাঁর সর্বশক্তিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার প্রতিফলন। মুসলিমদের জন্য এই আয়াতগুলো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও পরম নির্ভরতার শিক্ষাও দেয়।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيم (22) هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ (23) هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ [الحشر:22-24]
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা উচ্চারণ
আয়াত ২২: হুয়াল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ, হুয়ার রাহ্ মানুর রাহীম।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নাম আরবিতে অর্থসহ
আয়াত ২৩: হুয়াল্লাহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আল-মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু'মিনুল মুহাইমিনুল আজীজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। সুবহানাল্লাহি 'আম্মা ইউশরিকূন।
আয়াত ২৪: হুয়াল্লাহুল খালিকুল বারিউল মুসাওয়ির, লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়াহুয়াল আজীজুল হাকীম।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত বাংলা অর্থসহ
সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত (২২-২৪) এবং তাদের বাংলা অর্থ:
আয়াত ২২: هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ
বাংলা অর্থ: তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য সবকিছুর জ্ঞান রাখেন। তিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৯৯ নাম বাংলায়
আয়াত ২৩: هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ: তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি বাদশাহ, পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদানকারী, সংরক্ষক, পরাক্রমশালী, জবরদস্ত ও মহাপ্রতাপশালী। আল্লাহ মহিমান্বিত, তারা যেসব শরীক স্থির করে তা থেকে তিনি পবিত্র।
আয়াত ২৪: هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
বাংলা অর্থ: তিনি আল্লাহ, স্রষ্টা, সজ্জাকারী, রূপদানকারী। তাঁর জন্য রয়েছে উত্তম নামসমূহ। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ফজিলত
আয়াত গুলোতে আল্লাহর বিভিন্ন গুণবাচক নামের (আসমাউল হুসনা) উল্লেখ রয়েছে। এই আয়াত গুলোতে আল্লাহর ১৭টি মহৎ গুণাবলির কথা বলা হয়েছে, যা আমাদের আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান এবং দয়ালুতা সম্পর্কে সচেতন করে।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের অনেক ফজিলত রয়েছে। ইসলামী শিক্ষায় এই আয়াত গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এখানে কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
আরো পড়ুনঃ নামাজের বিভিন্ন অংশের দোয়া
- মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার ‘আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়বে।এরপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা ওই ব্যক্তির জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। আর এ সময়ের মধ্যে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩০৯০; আবু দাউদ, হাদিস : ২৯২২; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৯৭৯৫; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৫৯৭)
- হাদিসে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি সকালে এবং সন্ধ্যায় এই আয়াতগুলো পাঠ করবে, সে সমস্ত বিপদ ও কষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। পাপমোচনের একটি মাধ্যম হিসেবে এই আয়াতগুলোকে বর্ণনা করা হয়েছে।
- এই আয়াতগুলো আল্লাহর মহিমা ও প্রজ্ঞার বর্ণনা করে। যে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ করে, তার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও মহিমা আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
- একটি হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এই তিনটি আয়াত সকালে পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য রহমত কামনা করবে। আর যদি সে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করে, তবে সে সকাল পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- এই আয়াতগুলোকে পাঠ করা শুধু একটি দোয়া নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও মহিমা স্বীকার করার একটি উপায়। নিয়মিত পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সম্ভব।
- এই আয়াতগুলো বিপদ, শয়তানের প্রভাব এবং অন্য যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
এছাড়াও নিয়মিত সূরা হাশরের শেষ তিনটি আয়াত পাঠ করলে একজন মুমিনের জীবন আল্লাহর নিকট আরও প্রিয় ও বরকতময় হয়।
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার নিয়ম
সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার নিয়ম ইসলামিক শিক্ষায় বেশ সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই আয়াত গুলো বিশেষ সময় এবং উদ্দেশ্যে পাঠ করলে তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, বিপদ থেকে সুরক্ষা এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত অর্জনের মাধ্যম হতে পারে। নিচে পড়ার সময় কিছু নিয়ম ও উদ্দেশ্য দেওয়া হলো-
আরো পড়ুনঃ আল্লাহ ৯৯ নামের অর্থ ও ফজিলত
- সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠ: সকাল ও সন্ধ্যায় সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, সকালবেলা (ফজরের পর) এবং সন্ধ্যাবেলা (মাগরিবের পর) এই আয়াতগুলো পাঠ করলে আল্লাহ ৭০ হাজার ফেরেশতাকে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন।
- নামাজের পর: নিয়মিত ফরজ নামাজের পর এই আয়াতগুলো পাঠ করা যেতে পারে। এটি আল্লাহর স্মরণ এবং তাঁর গুণবাচক নামসমূহের প্রশংসা করার একটি উত্তম মাধ্যম।
- পাঠের সংখ্যা: নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, তবে একবার পাঠ করা যথেষ্ট। কেউ চাইলে ৩ বার বা ৭ বার পড়তে পারেন, বিশেষত বিপদ বা চ্যালেঞ্জের সময়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
- আখলাস ও একাগ্রতা: আয়াত গুলো পড়ার সময় একাগ্রতার সাথে পাঠ করা উচিত। আল্লাহর মহিমা এবং ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রেখে মনোযোগ সহকারে পড়া উচিত।
- তাজবীদের সাথে সঠিক উচ্চারণ: কুরআনের আয়াতগুলো সঠিকভাবে তাজবীদের (তাজবিদ) সাথে উচ্চারণ করা উচিত। এর ফলে আয়াতগুলোর পূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভ করা যায়।
- আল্লাহর সুরক্ষা কামনা: এই আয়াত গুলো বিপদ, শয়তানের প্রভাব এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়।
- আল্লাহর রহমত ও বরকত অর্জন: আল্লাহর গুণবাচক নামের প্রশংসা করার মাধ্যমে তাঁর রহমত ও বরকত কামনা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ পাচঁ কালেমা সমুহ
পাঠ শেষে আল্লাহর কাছে আপনার প্রয়োজনের কথা বলে তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন।নিয়মিত ও সঠিকভাবে সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়া আল্লাহর নৈকট্য ও সুরক্ষা পাওয়ার একটি উত্তম মাধ্যম।
সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের গুরুত্ব অপরিসীম। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলার আসমাউল হুসনা-এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসমা বা নাম উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম গুলো আল্লাহ তাআলা এই তিন আয়াতের মধ্যে তুলে ধরেছেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url