সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম

আপনারা অনেকেই  সর্বজনীন পেনশন আবেদন করতে চান।কিন্তু নিয়ম না জানার কারনে আবেদন করতে পারেন না। আপনারা যারা সর্বজনীন পেনশন আবেদন করতে পারেন না বা নিয়ম জানেন না আজকের আর্টিকেল তাদের জন্য।মূলত সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করেছি।

সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম

বর্তমান সময়ে সর্বজনীন পেনশন ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের সকল বাংলাদেশী নাগরিক আবেদন করতে পারবে।

সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম

সর্বজনীন পেনশন আবেদন স্কিমে যোগ দান করার জন্য আপনাকে অবশ্যই UPension.gov.bd ওয়েব সাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষর নিয়ম অনুযায়ী  যদি কোন ভুল তথ্য আবেদন জমা দেওয়া হয় তাহলে আবেদনটি গ্রহনযোগ্য হবে না বা প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং জমাকৃত অর্থ আপনাকে ফেরত দেওয়া হবে না।

আরো পড়ুনঃ ডাচ-বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম 

সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম বিস্তারিত ভাবে নিচে উল্লেখ হলো-

  • আবেদন প্রক্রিয়া একটি নিশ্চিত করণ পৃষ্ঠা দিয়ে শুরু হয় “এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না"।
  • তারপর এই পৃষ্ঠার নিচে সম্মত আছি বিভাগে ক্লিক করলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে আপনাকে পরের পৃষ্ঠায় নিয়ে জেতে হবে। এখানে আবেদনকারীদের অবশ্যই চারটি প্রোগ্রাম থেকে প্রযোজ্য প্রোগ্রাম বেছে নিতে হবে অভিবাসন, সমতা, সুরক্ষা বা অগ্রগতি।
  •  এরপর 10, 13 বা 17 সংখ্যার NID নম্বর, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডিও লিখতে হবে। তারপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতে পৃষ্ঠার নিচে যাচাই করণ কোডটি প্রবেশ করান।
  • তারপর আপনাকে যাচাই করণ কোডটি প্রবেশ করাতে হবে ও আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর এবং ইমেলে একটি এককালীন পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে, যা পরবর্তী ধাপে যেতে ফর্মটিতে প্রবেশ করতে হবে।
  • নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হবে প্রোফাইল পেজ। এই পৃষ্ঠায় প্রবেশ করার পরে, আবেদনকারীর NID নম্বর, ছবি, বাংলা এবং ইংরেজিতে নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা (যেহেতু এই তথ্য NID নম্বরের মাধ্যমে দেওয়া হয়) স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যক্তির NID-এর উপর ভিত্তি করে প্রদর্শিত হবে।
  • তবে এখানে আবেদনকারীর বাৎসরিক আয় লিখতে হবে এবং পেশাগত নাম, বিভাগ, অঞ্চল ও উপজেলা নির্বাচন করতে হবে। ক্যারিয়ার সিলেকশন রুমে শিক্ষক, বেসরকারি কর্মচারী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী, দিন মজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। সেখান থেকেই আপনার ক্যারিয়ার বেছে নিতে হবে। সমস্ত এন্ট্রি সম্পূর্ণ করার পরে, পরবর্তী "প্রোগ্রাম তথ্য" পৃষ্ঠায় যান।
  • প্ল্যান তথ্য পৃষ্ঠা প্রদর্শিত হলে, আপনার মাসিক চাঁদার পরিমাণ এবং চাঁদা প্রদানের পদ্ধতি নির্বাচন করুন।এখানে মূলত ৩ টি সাবস্ক্রিপশন পেমেন্টের অপশন আছে মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক। তারপর ব্যাংক তথ্য ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।
  • তারপর ব্যাংকের বিবরণ পৃষ্ঠায়, আবেদনকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম ও নম্বর, অ্যাকাউন্টের ধরন (সঞ্চয় বা বর্তমান জমা), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলা) এবং ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজি) লিখতে হবে। তারপর পরবর্তী মনোনীত তথ্য পৃষ্ঠায় যান।
  • মনোনীত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় নম্বর এবং জন্ম তারিখ সহ মনোনীত ব্যক্তিকে যুক্ত করুন। একাধিক মনোনীত কারীও এখানে যোগ করা যেতে পারে। এই সময়ে, মনোনীত কারীর মোবাইল ফোন নম্বর, মনোনীতকারীর সাথে সম্পর্ক এবং মনোনীত কারীর প্রাপ্যতা (একাধিক মনোনীতদের ক্ষেত্রে) "ফরম পূরণ" এর চূড়ান্ত ধাপে প্রবেশ করতে হবে।
  • এই ধাপে, পূর্বে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, পরিকল্পনা তথ্য, ব্যাংকের তথ্য এবং মনোনীত তথ্য প্রদর্শিত হবে। যদি কোন ভুল থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই শুরুতে ফিরে যেতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধন করতে হবে। সমস্ত তথ্য সঠিক হলে, আবেদন প্রক্রিয়া সম্মতি সহ সম্পন্ন করা উচিত। আবেদনকারীরাও এই সময়ে সম্পূর্ণ আবেদন পত্র ডাউনলোড করতে পারেন।

অবশ্যই মনে রাখবেন আপনারা যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া অনুযায়ী নিবন্ধন করছেন সমস্ত পৃষ্ঠা সম্পূর্ণ না করে ফিরে আসতে পারবেন না।কেননা আপনি যদি ফিরে যান, আপনাকে আবার পুরো প্রক্রিয়াটি আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।উপরে উল্লেখিত আলোচনা আপনি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে। 

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা সমূহ

18 থেকে 50 বছর বয়সী সকল বাংলাদেশী নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় 50 বছরের বেশি বয়সী নাগরিক যারা 10 বছর ধরে নিয়মিত মাসিক চাঁদা প্রদান করলে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

বিদেশ থেকে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার 2.5% প্রণোদনা হিসেবে  সর্বজনীন পেনশন আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টে জমা হবে।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অথবা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে জমা দিতে পারবেন

প্রবাসী পরিকল্পনা কার্যক্রম অনুযায়ী মাসিক চাঁদা অবশ্যই বৈধ উপায়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিতে হবে।

আপনার জমাকৃত চাঁদা একটি নিরাপদ কার্যক্রমে বিনিয়োগ করা হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বিনিয়োগের জন্য ট্যাক্স ফেরত পাওয়া যায়।

আবেদনের সময় অবদানকারীদের অবশ্যই একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

প্রাপ্ত মাসিক পেনশনের পরিমাণও আয়কর থেকে অব্যাহতি পাবে।

নির্ধারিত ফর্মের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে যার মাধ্যমে আবেদন কারীকে একটি অনন্য আইডি জারি করা হবে।

আপনার ইউনিক আইডিনম্বর, সাবস্ক্রিপশন রেট কত এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন পেমেন্ট তারিখ মোবাইল ফোন নম্বর এবং ইমেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইরের প্রবাসীদেরকে জানানো হবে।

সোনালী ব্যাংকের শাখা গুলো জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ফ্রন্ট অফিস হিসেবে কাজ করবে।

আপনার পেনশন উত্তোলনের জন্য কোনও অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। পেনশন স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

পেনশন প্ল্যান এবং অবেদান করার হার যে কোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে। তবে পেনশনার আইডি অপরিবর্তিত থাকবে।আপনারা অবশ্যই উপরে উল্লেখিত আলোচনায় জানতে পেরেছেন সর্বজনীন পেনশন সুবিধা কি এবং সর্বজনীন পেনশন সুবিধা সম্পর্কে। 

সর্বজনীন পেনশন স্কিম 

বাংলাদেশের সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচি চালু করেছে বয়স্ক লোকদের সুবিধার জন্য। এই কর্মসূচির উদ্যোগ হল দেশের বয়স্ক মানুষদের জন্য পেনশন এর আওতাভুক্তই নিয়ে আসা। সর্বজনীন পেনশন স্কিম মূলত ৪ টি। সর্বজনীন চারটি স্কিম হলো- প্রবাস স্কিম, সুরক্ষা স্কিম, প্রগতি স্কিম ও সমতা স্কিম। নিচে এই চারটি স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আরো পড়ুনঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ও টাকা লেনদেনের নিয়ম জানুন

প্রবাস স্কিম: বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক নির্ধারিত চাঁদা বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিয়ে উক্ত স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

প্রগতি স্কিম: মূলত বেসরকারি কর্মচারীদের জন্যপ্রগতি স্কিমটি প্রযোজ্য।কেননা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী অথবা উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

সুরক্ষা স্কিম: সুরক্ষা স্কিমে তারাই অংশ গ্রহণ করতে পারবে যারা হল নিজ নিজ কাজে নিয়োজিত যেমন হতে পারে শ্রমিক, কামার, কুমার, মৎস্যজীবী, তাঁতি, কৃষক, রিক্সাচালক।

সমতার স্কিম: বাংলাদেশ সরকার দরিদ্র জনগনের কথা  মাথায় রেখে এই স্কিমটি চালু করেছেন। যারা হতদরিদ্র অর্থাৎ নিম্ন আয়ের ব্যক্তিরা যাদের বাৎসরিক আয় ৬০ হাজার টাকার নিচে তাদের জন্য সমতার স্কিম সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

সর্বজনীন পেনশন আবেদন করার নিয়ম-শেষ কথা

উপরে উল্লেখিত বিষয় আপনারা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন সর্বজনীন পেনশন আবেদনের নিয়ম, সর্বজনীন পেনশন সুবিধা ও পেনশন স্কিম সম্পর্কে।আশা করি উপরে  তথ্য  সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আপনার উপকারে আসবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url