টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ

আপনারা কি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন?তাহলে আমাদের পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।কেননা এ পোস্টের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ বিস্তারিত তথ্য আলোচনার করেছি।আশাকরি আজকের পোস্টটি পড়লে  টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমনের ক্ষেত্রে কাজে আসবে।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ

বাংলাদেশের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমনের জন্য বর্ষাকালে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। ভরা বর্ষায় এর সৌন্দর্য অনেক গুন বেড়ে যায়। আর বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমন করে- টাঙ্গুয়ার হাতার। টাঙ্গুয়ার হাওড় ভ্রমন করার জন্য হাউজবোট বেছে নিতে হবে।টাঙ্গুয়ার হাওড় থেকে ভারতের মেঘালয়ের পাহার গুলো দেখা যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি।অথৈ পানি,জলাবন, নীল আকাশ, পাহাড় ও চোখ জুড়ানো সবুজ এ গুলো হাওরের সৌন্দর্য আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে।টাঙ্গুয়ার হাওর এর আয়তন ৬৯১২ একর এর মত।

তবে বর্ষাকালে হাওরের আয়তন আরও বহু গুন বেড়ে প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে। টাঙ্গুয়ার হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ,ব্যাঙ এবং সরীসৃপের সমন্বয়ে জীব বৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। শীতকালে এই হাওরে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বিচরণ ঘটে থাকে।

আরো পড়ুনঃ সাজেক ভ্যালির হোটেল ভাড়া ২০২৪

মেঘালয় থেকে প্রায় ৩০টি ছোট বড় ঝর্ণা বা ছড়া টাঙ্গুয়ার হাওরে এসে মিলিত হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি ওয়াচটাওয়ার রয়েছে এর আশে পাশের পানি খুবই স্বচ্ছ হওয়ায় এর ওপর থেকে হাওরের তলা পর্যন্ত দেখা যায়।

টাঙ্গুয়ার হাওরে সর্বমোট ৪৬ টি বড়-ছোট দ্বীপের মত ভাসমান গ্রাম অথবা দ্বীপ গ্রাম রয়েছে ।মূলত  বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালের দিকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ECA) হিসেবে ঘোষণা করে। আর ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট (Ramsar site) এর তালিকায় স্থান দখল করে নেয়।

হাওর ভ্রমণে কি কি দেখবেন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ শুধু মাত্র হাওর দেখা নয় সাথে আরও কিছু দর্শনীয় স্থান সবাই ঘুরে দেখে থাকে। টাঙ্গুয়া ভ্রমণ প্যাকেজের সাথে আপনারা  যা কিছু দেখতে পাবেন-

  • ছোট ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট
  • ওয়াচ টাওয়ার
  • শিমুল বাগান
  • বারেকের টিলা 
  • টেকেরঘাট এবং বরছরা 
  • অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ি
  • চুনাপাথরের লেক
  • যাদুকাটা নদী
  • শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক)
  • লাউড়ের গড় সহ আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়।

হাউজ বোট ও নোকা ভাড়া

বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের বিভিন্ন মানের হাউজবোট , সেমি হাউজবোট অথবা নৌকা পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখার জন্য আবার এ সব হাউজবোট প্রয়োজনে রাতে থাকাও যায়।টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে বিভিন্ন মানের হাউজবোটের ভাড়া বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

সাধারণত এক রাত থাকা, সব বেলার খাবার ও টাঙ্গুয়ার হাওর সহ আশে পাশের সকল স্পট ঘুরে দেখার প্যাকেজ প্রিমিয়াম বোট গুলোর ক্ষেত্রে জন প্রতি ৬,০০০-১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মোটামুটি মানের সেমি হাউজবোট গুলোর প্যাকেজ ৪,৫০০- ৬,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া পুরো হাউজবোট রিসার্ভ করলে মান ও ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ৪০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ কক্সবাজার হোটেল ভাড়া 2024

সাধারণত হাউজবোট গুলোর প্যাকেজের ,মধ্যে সব কিছুই অন্তর্ভূক্ত থাকে। তারপরেও উচিৎ বুকিং বা ভাড়া করার পূর্বে তাদের প্যাকেজ ঠিক ভাবে দেখে নেওয়া , প্রয়োজনে ভাল ভাবে সব কিছু বুঝে বুকিং বা ভাড়া করতে হবে। শুধু দিনের ট্রিপ হলে খরচ কিছুটা কম হবে।কিন্তু রাতের আর দিনের হলে খরচ পরিমাণ কিছুটা বেশি হবে।

এছাড়া খরচ কিছুটা কমানোর জন্য লোকাল বডির যে নৌকা গুলো আছে এ গুলো ভাড়া করতে পারেন। তবে ভাড়া করার আগে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন, নৌকায় বাথরুম আছে কিনা, বিদ্যুত, লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা ব্যবস্থা আছে কি না। এ সকল বিষয় ভাল ভাবে দেখে নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ সেন্টমার্টিন রিসোর্ট ভাড়া ২০২৪ 

নৌকা ভাড়া মূলত কয়টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে থাকে।যেমন, নৌকায় ধারণ নৌকার সুযোগ-সুবিধা, কোন কোন জাইগা ঘুরে দেখবেন, রাতে থাকবেন নাকি শুধু দিনের ট্রিপ এবং কোন সিজনে ঘুরবেন তার উপর।কিন্তু নৌকা ভাড়া অনেক সময় কম বেশি হয়ে থাকে স্থান ও সময় ভেদে।

এক দিনের জন্য নৌকা ভাড়া পরতে পারে,

  • ছোট নৌকা ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা
  • মাঝারি নৌকা ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা
  • বড় নৌকা ৫০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা

তবে আপনি যদি এক রাত নৌকায় থাকতে চান তাহলে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।এ ছাড়া রান্নার জন্য নৌকার মাঝিকে খরচের টাকা দিলে সে বাবুর্চি নিয়ে যাবে কিংবা নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে। কি করবেন তা অবশ্যই মাঝির সাথে আগে আলোচনা করে দরদাম ঠিক করে নিবেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর কখন যাবেন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সব চেয়ে উপযুক্ত সময় হল বর্ষাকাল।কেননা জুন মাস হতে সেপ্টেম্বর মাস হাওর ভ্রমণের জন্য সব চেয়ে ভালো সময়।কিন্তু বছরের অন্য সময় টাঙ্গুয়ার হাওরের পানি কম থাকায় অনেকেই জেতে চায় না। তবে কিছুটা ভিন্ন পরিবেশে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করতে চাইলে শীতকালে ভ্রমণ করতে হবে।কারন এ সময় অতিথী পাখির আনাগুনা অনেক বেশি থাকে।তাই বর্ষাকাল ও শীতকাল দুটোই ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সতর্কতা ও পরামর্সঃ

  • টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ কালে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন।
  • যে কোন কিছুর জন্য দামাদামি করে নিবেন।
  • এক সাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। ৫থেকে ৮,১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো।
  • হাওরে বজ্র পাত হলে নৌকার ছৈয়ের নিচে অবস্থান করবেন।
  • খাবারের অতিরিক্ত অংশ ও কোন ধরনের প্যাকেট হাওরের পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
  • উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বা যন্ত্র বাজানো বিরত থাকুন।
  • রাতের বেলা বেশি উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না।
  • টাংগুয়ার মাছ, বন্য প্রাণী বা পাখি ধরা বা এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে এমন কাজ থেকে বিরিত থাকুন।
  • টাংগুয়ার জলা বনের কোন রূপ ক্ষতি সাধন না করার ব্যপারে সতর্ক থাকুন।
  • ভ্রমণে সাথে নিন টর্চ ব্যাকআপ ব্যাটারি সহ, পাওয়ার ব্যাংক, চাদর, রেইন কোর্ট বা ছাতা, নিয়মতি সেবনীয় ওষুধ, টয়লেট পেপার, ব্যাগ ঢেকে ফেলার মতো বড় পলিথিন, প্লাস্টিকের স্যান্ডেল (চামড়ার স্যান্ডেল পরিহার করা ভাল হবে),
  • সান গ্লাস, ক্যাপ বা হ্যাট, গামছা যা সহজে শুকাবে, খাবার পানি, হাফ প্যান্ট এবং সহজে শুকায় এমন জামা কাপড়।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ-শেষ কথা

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি সাথে আর বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করা কোন সময় ভাল ও হাউজবোটের ভাড়ার পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

আশাকরি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।এমনই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url