পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
আপনি হয়তো পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুণ অনেক । কিন্তু আমরা অনেকেই পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
যেহেতু আপনি পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার কি এবংপুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা সাস্থের জন্য অনেক উপকারি।তাই পুদিনা পাতা অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয় ঔষধ হিসেবে পরিচিত। বহু রোগ দূর করতে এটি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। এই গাছের পাতা তরিতরকারির সাথে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে বেশি ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের বড়া তৈরির কাজে।
বৈজ্ঞানিক নাম
পুদিনা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম Mentha spicata । এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত। পৃথীবির বিভিন্ন দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে হয় বা পাতা পাওয়া যায়। এর পাতা সুগন্ধি হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
পুদিনা পাতার গুনাগুণ
আমরা জানি পুদিনা পাতা অনেক উপকারী উদ্ভিদ।পুদিনা পাতা মানব শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।আর মুখের স্বাদ বাড়াতেও এটি খুব কার্যকর। এছাড়াও আরও যেসব ক্ষেত্রে পুদিনার পাতা ব্যবহার করা যায়, তা হলো
আরো পড়ুনঃ তুলসী গাছ ও নিম গাছ এর ঔষধি গুণাগুন
- পুদিনা পাতা মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে থাকে ও ব্রণ ওঠাও বন্ধ হয়।
- পুদিনার পাতা শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করতে সহায়তা করে।
- অজ্ঞান ব্যক্তির জ্ঞান ফিরাতে সাহায্য করে থাকে। জ্ঞান ফিরানো জন্য তার নাকের কাছে কিছু তাজা পুদিনা পাতা ধরুন। দেখবেন, জ্ঞান ফিরে পেয়েছে লোকটি।
- পুদিনার পাতা চুলে উকুন মারতে সহায়তা করে।এটি ভালো করে পিষে তার রস ভালো করে মাথায় ব্যবহার করেন। যাদের চুলে উকুন আছে, তারা খুব উপকার পাবেন।
- শরীরের ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতার চা খুব কাজে দেয়।
- মাথা ও পেট ব্যথা নিরাময়েও পুদিনার পাতা খুব উপকারী।
- যাদের মাঝে মধ্যে হেঁচকি ওঠে, তারা পুদিনা পাতার সাথে গোল মরিচ বেঁটে তা ছেঁকে নিয়ে রসটুকু পান করুন। দেখবেন হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।
- পুদিনা পাতা কফ-কাশি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- পুদিনা পাতা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
পুদিনা পাতার ব্যবহার
পেটের পীড়ায়
পুদিনা পাতা সাস্থের জন্য অনেক উপকারি। আর এটি পেটের পীড়ায় অনেক কার্যকারী।এদীর্ঘস্থায়ী বদহজমের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এছাড়াও পুদিনা কোলনের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে।
অ্যাজমা
পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে।যার ফলে অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে থাকে। আবার শাসনালী পরিষ্কার থাকে।
এন্টিক্যান্সার
পুদিনা পাতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনোটারপিন নামক উপাদান। এটি বিভিন্ন জায়গা যেমন- স্তন, লিভার ও অন্যান্য ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
থানকুনি পাতা
গাছটি ক্ষুদ্র লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা কিছুটা ক্ষুদ্র গোলাকৃতির হয়ে থাকে। পাতার ধারে খাঁজ রয়েছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এই গাছটিকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে উপকূলীয় লবনাক্ত আবহাওয়ায় এটি ভালো জন্মে। গ্রামীণ সাধারণ মানুষের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়।গ্রামে অবশ্য থানকুনি গাছের অভাব নেই। সহজেই দেখা মেলে ঝোপে জঙ্গলে।শহরাঞ্চলে থানকুনির খোঁজ পাওয়া একটু কঠিনই বটে।
আরো পড়ুনঃ কালো জিরার ও জিরা ঔষধি গুনাগুণ
থানকুনি পাতা সাস্থের জন্য অনেক উপকারি।রাজধানীর কাঁচা বাজার গুলোতে একটু খোঁজ করলেই মিলবে থানকুনি পাতা। ফ্রিজেও কয়েকদিন রাখতে পারবেন থানকুনি পাতা। আর গ্রামে বসবাস করেন যারা তাদের বাড়ির আশপাশে খোঁজ করুন, সহজেই মিলে যাবে।বাংলা নাম থানকুনি। অঞ্চলভেদে এটি টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে পরিচিত।
বৈজ্ঞানিক নাম
থানকুনি বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica.থানকুনি পাতা পাওয়া যায় ভারত, সিংহল, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে ভেষজ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে । এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিক ইত্যাদি অনেক দেশের দেশী চিকিৎসাবিদ্যায়।
থানকুনি পাতার গুনাগুণ
আমরা জানি বসন্তকালে থানকুনি লতার ফুল আসে এবং গ্রীষ্মতকালে ফল পাকে।আর বীজের মাধ্যমেও অঙ্গজ জনন উভয়ভাবেই থানকুনির বংশবিস্তার হয়। প্রতিটি গিট থেকে শিকড় বের হয় এবং শিকড়সহ লতা এনে আর্দ্র জমিতে রোপন করলেই থানকুনি জন্মে। তবে খেয়াল রাখবে হবে যে এটি আর্দ্র মাটি পচন্দ করলেও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের মাটি থানকুনি জন্মানোর জন্য খুবই উপযোগী হলেও নার্সারীতেও এ লতার চারা পাওয়া কঠিন। তবে গ্রামাঞ্চলে এটি সর্বত্রই পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
- শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতে অনেকের থ্রম্বোসিসের সমস্যা থাকে।
- শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করে থানকুনির ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে।
- আলসারের যে কোন সমস্যা দূর সহায়তা করে।
- মানসিক অবসাদ দূর করে সহায়তা করে।
- মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ঘুম ভালো হতে সহায়তা করে।
- ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনে।
- ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে সুন্দর করতে সহায়তা করে।
- রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে থাকে।
থানকুনি পাতার ব্যবহার
জ্বর
থানকুনি পাতার জ্বর তারাতারি ভালো করতে সাহায্য করে।জ্বর হলে থানকুনি পাতা বেঁটে মধুর সাথে মিস করে খেলে অনেক উপকার পাবেন।
পেট ব্যথা
থানকুনি পাতা বেটে গরম ভাতের সাথে খেলে পেট ব্যথা ভাল হয়।
লাবণ্যতা
ত্বকের লাবণ্যতা কমে গেলে থানকুনি পাতার রস দুধ দিয়ে খেতে হবে।এ ভাবে নিয়মিত করলে উপকার পাবেন ও ফিরে আসবে ত্বকের লাবণ্যতা।
মুখে ঘা
থানকুনি পাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে গারগিল করতে হবে।
সাধারণ ক্ষত বা আঘাত
থানকুনি পাতা সকল ধরনের ক্ষত বা আঘাত সারাতে সাহায্য করে।আর থানকুনি বেটে ঘিয়ের সাথে জ্বাল দিয়ে ঠাণ্ডা করে তা ক্ষত স্থানে লাগালে তারাতারি ক্ষত ভাল হয়।কোথাও যদি কেটে যায় তাহলে থানকুনি পাতার গাছ বেটে অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্রলেপ দিলে উপকার পাবেন।
চুল পড়া
অনেকেই জানেন থানকুনি পাতা চুল পড়া বন্ধ করে থাকে।কেননা শরীরে ভিটামিনের অভাব এর কারনে চুল পড়লে আমাদের পুষ্টিকর ভিটামিন যুক্ত আছে এমন খাবারের পাশাপাশি থানকুনি পাতার রস দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
পেটের দোষ
মল পরিষ্কারভাবে না হলে, পেটে গ্যাস হলে, কোনো কোনো সময় মাথা ধরা এর জন্য ২ থেকে ৩ চা চামচ থানকুনি পাতার গরম রস ও সম পরিমাণ গরুর কাঁচা দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
স্মরণশক্তি
স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতা অনেক কার্যকারী।
নাক বন্ধ
ঠাণ্ডায় জন্য থানকুনি পাতা অনেক উপকারি।ঠাণ্ডায় যদি নাক বন্ধ হয় বা সর্দি হলে থানকুনি পাতার শিকড়রে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন-শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার গুনাগুন সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি পুদিনা পাতা ও থানকুনি পাতার বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url