তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান কেনো বিস্তারিত তথ্য জানুন

আপনারা যদি তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান কেনো জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন ।কেননা আর্টিকেলের মধ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি  তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান কেনো বিস্তারিত তথ্য জানুন

তাজমহল মূলত আগ্রায় সমাধি কমপ্লেক্স।এটি পশ্চিম উত্তর প্রদেশ রাজ্য, উত্তর ভারতে অবস্থিত।শাহজাহান তার স্ত্রী মুমতাজ এর জন্য তাজমহল নির্মাণ করেন। তাজমহল এর ইতিহাস জানতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক  এখানে বেড়াতে আসেন।মূলত তাজমহল মুঘল সম্রাট তৈরি করেছিলেন শাহজাহান তার স্ত্রীকে অমর করার জন্য ।

তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান তাজমহল। আবার এটি বিশ্বের অন্যতম রোমান্টিক বিল্ডিং ও ভালোবাসার যুগলদের স্থান নামে পরিচিত। তাজমহলকে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।এর ভিতরের খোঁদাই করা অর্ধ বৃত্তাকার মার্বেল পাথর দিয়ে সাজানো কাজ সবাইকে মগ্ধ করে।তাই অনেক পর্যটক তাজমহলের ঐতিহ্যবাহী স্থান ও দর্শনীয় স্থান গুলো দেখার জন্য বেড়াতে যায়।

তাজমহল

তাজমহল মূলত ভারতের পশ্চিম উত্তর প্রদেশ আগ্রার অবস্থিত।এটি মুমতাজের রাজকীয় সমাধি নামেও পরিচিত।তাজমহল মুমতাজ এর জন্য নির্মাণ করা হয়।এটি আগ্রা শহরের পূর্ব দিকের যমুনা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত।বিশ্বের সপ্তাশ্চার্য এই নিদর্শনটি বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে পরিচিত। শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক এই তাজমহল প্রেমিক যুগলদের কাছে ভালোবাসার নিদর্শন হিসাবে সুপরিচিত। তাই যুগ যুগ ধরে পর্যটকদের আকর্ষণের শীর্ষে থাকে তাজমহল।

তাজমহলের ইতিহাস

মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম (যিনি মমতাজ নামেই বেশী পরিচিত) কে উৎসর্গ করে এই অপূর্ব তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। মমতাজ তার চতুর্দশ কন্যা জন্মদানের সময় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মমতাজের মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহান মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়েছিলেন আর তাই স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ হিসেবে তাজমহল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু  করেন ।তার কাজ প্রায় ২২ বছর পর ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয়েছিল। তাজমহলের নির্মাণ কারিগর নিয়ে অনেক ধরনের বিতর্ক থাকলেও মূলত উস্তাদ আহমেদ লাহুরির তত্ত্বাবধানে প্রায় ২,০০০ জন পারস্য, অটোম্যান সম্রাজ্য এবং ইউরোপের সুনিপুন নকশাকার ও কারিগর পারস্য ও মুঘল স্থাপত্য অনুসারে এটি নির্মাণ করেন। ১৯৮৩ সালে মুঘল স্থাপ্যতের নিদর্শন তাজমহল ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।

তাজমহল এর অবস্থান

তাজমহল ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ভবন।ভারতের আগ্রা শহরের যমুনা নদীর দক্ষিণ তীরে তাজমহল অবস্থিত। তাজমহল হলো দুইটি শব্দের সমন্বয় গঠিত।আর তাজ অর্থ“মুকুট” এবং মহল অর্থ“প্রাসাদ”। তাই তাজমহলকে রাজ প্রাসাদের মুকুট বলা হয়। তাজমহলের অবস্থান ধর্মপুরী ফরেস্ট কলোনি , তাজগঞ্জ , আগ্রা , উত্তর প্রদেশ ভারত। তাজমহল মুঘল সম্রাট শাহজাহানের একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। এটি তার  স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মরণে নির্মিত হয়েছিল।

তাজমহল দর্শনীয় স্থান

তাজমহল প্রায় ৪২ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উথেছে পুরো তাজমহল কমপ্লেক্স প্রধানত পাঁচটি ভাগে বিভক্ত- প্রধান প্রবেশদ্বার, বাগান, মসজিদ, অতিথিশালা ও চারটি মিনার সম্মেলিত সম্রাজ্ঞী মমতাজের সমাধিসৌধ।নিচে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

প্রধান প্রবেশদ্বার

তাজমহলের মূল চত্বরটি দুর্গের মতো তিন দিক থেকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।এর প্রাচীর গুলোর বাইরে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অন্যান্য স্ত্রী ও মমতাজের প্রিয় পরিচারিকাদের সমাধি অবস্থিত। প্রাচীরের ভিতরে দেয়াল গুলো নকশাখচিত।মুঘল স্থাপত্য ও নকশাখচিত তাজমহলের প্রধান প্রবেশদ্বার মার্বেল পাথরে তৈরি।তাজমহলের সবগুলো প্রাচীর দিয়ে গম্বুজাকৃতির একটি স্থাপত্য গড়ে তোলা হয়েছে।যা বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মূল চত্বরে দুটি পৃথক স্থাপনায় লাল রঙের মসজিদ ও মুঘল অতিথিশালা জাওয়াব রয়েছে।

বাগান সমূহ

তাজমহলের সামনের চত্বরে অনেক রয়েছে।তাজমহলের বাগান গুলোকে স্বর্গের বাগানের সাথে তুলনা করা হয়েছে।আর এখানে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ১৬ টি আলাদা ফুলের বাগান রয়েছে।যার সৌন্দর্য অপূর্ব মায়াবী ।আবার গাছ গাছালিতে ঘেরা চলাচলের রাস্তা ও সুন্দর কিছু ঝর্ণা আছে।

তাজমহল এর সমাধি অংশ ও প্রধান গেটের মাঝামাঝি অংশে একটি মার্বেল পাথরের চৌবাচ্চা রয়েছে যার পানিতে পুরো তাজমহলের প্রতিফলিত রূপ দেখা যায়।এই চৌবাচ্চা পাস দিয়ে অনেক ফুলের গাছ লাগানো আছে।যখন এ গাছ গুলোতে ফুল ফোটে অপূর্ব সুন্দর লাগে।

মসজিদ

তাজমহলের ভিতরের মসজিদ গুলা অনেক সুন্দর।এর পিট্রা দুরা কৌশল ব্যবহার করে মূল্যবান পাথরের উপর জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশায় পবিত্র কুরআনের আয়াত সুন্দরভাবে খোঁদাই করা রয়েছে।মসজিদটির প্রাথমিক নকশা শাহজাহানের তৈরি অন্যান্য ইমারতের মতোই।বিশেষ করে তার মসজিদ-ই-জাহান্নুমা অথবা দিল্লী জামে মসজিদ একটি বড় ঘর যার উপর তিনটি গম্বুজ। মুঘল আমলের মসজিদগুলোর নামাজ পড়ার জায়গা তিন ভাগে ভাগ করা থাকত। বড়ো নামাজ পড়ার জায়গার দু'পাশে সামান্য ছোটো নামাজ পড়ার জায়গা। তাজমহলের প্রত্যেকটি নামাজ পড়ার জায়গার উপরে বিশাল গম্বুজ আছে কিন্তু জায়গাটি খোলা।

মুঘল অতিথিশালা

তাজমহল কমপ্লেক্সের নির্মাণের পর অতিথিদের জন্য আলাদা ভাবে অতিথিশালা নির্মাণ করা হয়।আর তাজমহল থেকে ১ মাইল দূরে যমুনা নদীর ডান দিকে আ গ্রা ফোর্ট অবস্থিত যা মুঘল আমলে সেনাদের দূর্গ থাকলেও পরবর্তীতে শাহজাহানের নেতৃতে রাজ পরিবারের বাসস্থানের সাথে সাথে রাজকীয় নানা কর্মকাণ্ডের স্থান হিসেবে পরিচিত পায়।

মমতাজের সমাধিসৌধ

মমতাজের সমাধিসৌধের ভিতরের অন্দরমহল অষ্টভুজাকৃতির খোঁদাই করা অর্ধ বৃত্তাকার মার্বেল পাথর দিয়ে সাজানো। এখানেই সম্রাট শাজজাহান ও তার স্ত্রী মমতাজের সমাধিস্থল। যদিও এগুলো শুধু ডামি সমাধি যা সূক্ষ তারের কারুকার্য মণ্ডিত মার্বেলের এক ধরনের পর্দা দিয়ে আবৃত। ডামি সমাধি স্থলের ৮০ ফুট নিচে ভাস্কর্যশিল্পে অলংকৃত শিলালিপিতে সমন্বিত রয়েছে তাদের প্রকৃত সমাধি। পূর্ণিমার সময় যখন সমাধির উপর চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয় তখন চারপাশে এক অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

তাজমহল এর কিছু অজানা তথ্য

ভারতের তাজমহাল বিশ্বের অন্যতম রোমান্টিক বিল্ডিং।এটি মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৩১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করেন তাঁর  স্ত্রীর স্মৃতিতে, যাকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন।

  • শাহজাহান ও মমতাজের ১৯ বছরের সংসারে তাদের ছিল ১৩ জন সন্তান। ১৪ তম সন্তান জন্ম দিতে মৃত্যু হয় মমতাজের।
  • তাজমহালের নির্মাণকাজ শেষ করতে ১,০০০ টি হাতি, ২০,০০০ লোক এবং ২০ বছর সময় লেগেছে।
  • তাজমহালের নকশাটি খুব সুন্দর ও আলাদা সৌন্দর্য   ছিল।
  • তাজমহল, চারটি ১৩০ ফুট উঁচু (প্রায় ৪০ মিটার) মিনারের বিশাল প্ল্যাটফর্মের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
  • এটি দেখতে সুন্দর লাগতে পারে তবে এ জাতীয় প্ল্যাটফর্মের মূল উদ্দেশ্য ছিল নান্দনিকতা নয়।
  • টাওয়ারগুলো এমনভাবে কাত করে রাখা যাতে যদি এগুলো পড়ে যায় তবে তাজমহলের পুনরায় ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
  • প্রেমের স্মৃতিস্তম্ভ হওয়ার পাশাপাশি তাজমহলও একটি খুব রহস্যময় স্থান। এতে অসংখ্য সিল করা কক্ষ লুকিয়ে রাখা আছে যেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হয় না।
  • নদীর পাশ থেকে তোলা তাজমহলের কয়েকটি ছবিতে আপনি প্রাসাদের অভ্যন্তরের কয়েকটি কক্ষের মতো দুটি বেসমেন্টের স্তর দেখতে পাচ্ছেন যেগুলি কঠোরভাবে সিল করা হয়েছে।
  • কিছু গবেষক দেখিয়েছেন যে সিল করা চেম্বারগুলি মার্বেল দ্বারা গঠিত যা কার্বন ডাই অক্সাইডের সংস্পর্শে এলে মার্বেলটি চিপানো শুরু করে।
  • যার ফলস্বরূপ চেম্বারগুলি সিল করে দেওয়া এবং জনগণের নজর থেকে দূরে রাখা হয়।
  • এই কক্ষগুলির উভয় উপরে বায়ুচলাচল নেই তবে এটি সম্ভবত এক কারণ।
  • অন্য গবেষণায় ধারণা করা হয় তাজমহলের নিচেই মমতাজের মরদেহ রয়েছে এবং তাঁর মরার মুহুর্তে মরদেহটি একই একইভাবে প্রাসাদের বেসমেন্টে সংরক্ষণ করা আছে।

তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান-শেষ কথা

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল  তাজমহল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান কেনো সে সম্বন্ধে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url