রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বিস্তারিত তথ্য
আমরাদের আজকের আলোচনা মূখ্য বিষয় হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে।আমরা এ আর্টিকেল এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর সকল বিস্তারিত তথ্য আলোচনার করার চেস্থা করেছি। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পরেন তাহলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানুষের সুবিধার জন্য।এটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে পদ্ধা নদীর তীরে অবস্থিত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রঃ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান হল পাবনার জেলার ঈশ্বরদীতে। এর নির্মাণ কাজের জন্য উদ্ভাবন হয় ২০২১ সালের ১০ই অক্টোবর এবং ২০২২ সালের ১৮ই অক্টোবর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্ভবনি অনুষ্ঠানে যোগ দান করেন।এ উদ্ভবনি অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন আমাদের লক্ষ্য হল বাংলাদেশ যাতে পৃথীবিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে ও বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
পারমাণবিক শক্তি মূলত বাংলাদেশের মানুষের শান্তির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে এবং সে বিদ্যুৎ গ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছাবে। মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে আরও বলেন, আমরা অন্তত একশোটা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। এসব জায়গাতে শিল্পায়ন হবে।আর যত বেশি শিল্পায়ন করা হবে তত বেশি বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই যাবে।
তার জন্য সকল কিছু মাথায় রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাবনার রূপপুর এর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর চুল্লি নির্মিত হয়েছে রাশিয়ায়। ভিভিআর- ১২০০ মডেলের এই রিয়াক্টরে পরমাণু জ্বালানি পুড়িয়ে মূল শক্তি উৎপাদন হবে এবং ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুরের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজ শুরু করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে প্রাথমিক ভাবে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে বলে ধারনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে একক প্রকল্প গুলোর মধ্যে এটি সব থেকে বড় অবকাঠামো বলে বিবেচিত।করোনা মহামারীর মধ্য এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানিঃ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান জ্বালানি হচ্ছে ইউরেনিয়াম।এর এক একটি ইউনিটে ১৬৩ টি ফুয়ের অ্যাসেম্বলি লোড করা হবে। দুইটি চুল্লিতে ৩২৬ টি ফুয়েল অ্যাসেম্বলি থাকবে ৮০ টন ইউরেনিয়াম জ্বালানি। চুক্তির আওতার মধ্যে প্রথম তিন বছরে জ্বালানি রাশিয়া থেকে আসবে। এরপর প্রতি ১৮ মাস পর পর এক তৃতীয়াংশ ফুয়েল অ্যাসেম্বলি বদলানো হবে। রুপপুর এনপিপি দুটি রাশিয়ান ভিভি আর চুল্লি দিয়ে সজ্জিত করা হবে।
যার প্রতিটির ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। রুপপুর এনপিপির জন্য রেফারেন্সিয়াল প্রকল্প হল রাশিয়ার Novovoronezh II NPP, যা VVER-1200 চল্লিশহ একটি অনন্য নতুন প্রজন্মের 3+ পাওয়ার ইউনিট। পারমাণবিক জ্বালানি পেয়েছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বৃহস্পতিবার পাঁচই অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট লাদিমির পুতিনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণ করেছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে বিশ্বের ৩৩ তম পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী ও দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারকারী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের পর এই প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারকে দ্বিগুনের বেশি অভ্যন্তরীণ রিটার্ন দেবে।সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, ১২০ মেগা ওয়াটের দুটি মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা।
এই ব্যয়ে অর্থ প্রদান করবে রাশিয়ান সরকার ৯০% আর ১০% ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার।উৎপাদনে করা হয়ে গেলে রাশিয়াকে প্রতি বছর ঋণ শোধ করতে হবে ৫৬৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৫৬ কোটি ডলার। এই বিপুল অংক দেখে কেউ কেউ এটিকে সাদা হাতির প্রকল্প বলে বিরুপ মন্তব্য করতে পারে।সরকারের সংশ্লিষ্টরা এমন অভিযোগকে নাকচ করে বলেছে, এটা শ্বেত হস্তির প্রকল্প নয়, বরং উন্নয়নের মাইলফলক।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ শেষ হবার পর বাংলাদেশকে প্রতি বছর কিস্তি দিতে হবে ৫৬ কোটি ডলার।কিন্তু প্রকল্পের রিটার্ন থেকে কিস্তির অর্থ উঠে আসলে ভর্তুকীর দরকার পড়বে না। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পরমাণু শক্তি তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ হবে সর্বোচ্চ। ফার্নেস ওয়েল ও ডিজেলের তুলনায় সৌরশক্তি থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
আইপিপি ও নির্ভর এলএনজির ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আমদের প্রায় নাগালের বাইরে এখন মার্কিন ডলারের উৎসব বিনিময়ে হার ধরলেও অন্যান্য জ্বালানি শক্তির তুলনায় পারমাণবিক বিদ্যুতি হবে সাশ্রয়ী।রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে ২.৪ গিগাবাইট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পরিকল্পিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
যার প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবে। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে প্রায় ৬০ বছর।রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন। একক প্রকল্প হিসেবে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোন অবকাঠামো স্থাপন প্রকল্প। সরকারের মতে এই প্রকল্প পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিকভাবে লাভজনকও বটে। রাশিয়া আর রসাতলের এএসি নামীয় সংস্থাকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার পর এর স্থায়িত্ব হবে প্রায় একশত বছর। বাংলাদেশের মতো জনঘনবসতি পূর্ণ ও পারমাণবিক প্রযুক্তিতে নিজস্ব সক্ষমতাহীন একটি দেশে স্রেফ আমদানি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার মানে হলো পারমাণবিক প্রযুক্তির স্বাভাবিক ঝুঁকির ওপর বাড়তি ঝুঁকি বাংলাদেশের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র মূলত সর্বাধিক ভালো ডিজাইনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূন জেনারেশন থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টরের সহ নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কায় একেবারে নেই বললেই চলে। এছাড়া পাঁচ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তেজস্ক্রিয়তা যাতে কোনক্রমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্যানিটারি সুরক্ষা অঞ্চলের বাইরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধাঃ
বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় অনেক দেশ বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জোড়ালো নজর দিয়েছে। প্রচলিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে।র তাহলে চলুন জেনে নিই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবিধা গুলো কি কি।-
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অল্প পরিমান জ্বালানির ব্যবহার করা হয় বলে এর জ্বালানি পরিবহন ও সংরক্ষণের খরচ অনেকটাই কম।
- দেশের অন্য সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা সম্ভব হবে।
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রাথমিক ডিস্ট্রিবিউশন খরচ অনেকটাই কম।
- বৈইরি আবহাওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না।
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শীতলীকরণের জন্য পানির পরিমাণ অনেকটাই কম প্রয়োজন হয়।তার জন্য কম পানি রয়েছে এমন অঞ্চলেও এটি স্থাপন ও ব্যবহার করা যায়।
তাছাড়া বেশি পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় না ও কয়লার খনির প্রয়োজন হয় না বলে এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অল্প পরিমাণ জ্বালানি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা যায়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অসুবিধাঃ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনেক ধরনের সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে যা বাংলাদেশকে ক্ষতির মুখে নিয়ে যেতে পারে।নিচে এর অসুবিধা সমূহ দেওয়া হলো-
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনেক বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতি হতে পারে।
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জ্বালানির দাম অনেক বেশি এবং জ্বালানি নিয়ে আশার প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল প্রকৃতির।
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূলধন ব্যয় অন্যান্য সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় খুব বেশি।
- সব সময় পরিবর্তনশীল লোডের জন্য এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উপযোগী নয়।
- পারমাণবিক জ্বালানি থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ যেহেতু অনেক বেশি তেজস্ক্রিয় সেহেতু এর সংরক্ষণ পদ্ধতি ও বেশ জটিল। ফলে এর কাছাকাছি অঞ্চল গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
- পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য একটি গভীর পরীক্ষা খনন করে অথবা নদীর তীর থেকে অনেক দূরে কোন সমুদ্রে নিষ্পত্তি করা হয়।এতে পরিবহন ব্যয় বেশি হয়।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক, আশা করি উপরের উক্ত আর্টিকেলটি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনার এই তথ্য গুলো হয়তো অনেক উপকারে আসবে ও আপনার কাছে ভাল লেগেছে।যদি আজকের এই বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থেকে থাকে অবশ্যই কমেন্টে বক্সসে জানাবেন।এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url