কৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

বর্তমান সময়ে কৈ মাছ চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে।কিন্তু অনেকেই জানেন না কি ভাবে কৈ মাছ চাষ করা যায়।কৈ মাছের চাষ সম্পর্কে আপনারা যারা জানতে চান আজকের আর্টিকেল আপনাদের জন্য।এ আর্টিকেল এর মধ্যে কৈ মাছের চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কৈ মাছ এর চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

কৈ মাছ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আবহমানকাল ধরে একটি অত্যন্তজনপ্রিয় মাছ হিসেবে পরিচিত। এ মাছটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং কম চর্বিযুক্ত। জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায় বিধায় এ মাছের বাজারমূল্য তুলনামূলক ভাবে বেশি।এর জন্য বর্তমানে অনেকেই কৈ মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

কৈ মাছের চাষ

কৈ মাছ প্রচীন সময়ে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হাওর-বাঁওড় এবং প্লাবনভূমিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।কিন্তু দেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচের জন্য বাঁধ নির্মান,প্রাকৃতিক জলাশয়ে পলিমাটি পড়ে ক্রমশ ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যাওয়া, পানির দূষণ, নির্বিচারে মাছ আহরণ আর সেই সাথে মাছের রোগবালাই বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে এ মাছটির প্রাচুর্যতা কমে যাচ্ছে।পাশাপাশি নদী-নালা, খাল-বিল, প্লাবনভূমি ও মোহনায় প্রাকৃতিক বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাছটি ইতোমধ্যে বিপন্ন প্রজাতির মাছ বলে চিহ্নিত হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ পাবদা মাছ পকুরে চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

কৈ মাছ মূলত আগাছাযুক্ত, কচুরিপানা এবং ডালপালা অধ্যুষিত জলাশয়ে স্বচ্ছন্দ্যে বসবাস করে থাকে। কম গভীরতাসম্পন্ন পুকুরে এদের চাষ করা যায়। অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এরা বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে বিধায় জীবিত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। এরা কম রোগবালাই ও বিরূপ প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশে অত্যন্ত সহনশীল।

দেশীয় প্রজাতির অত্যন্ত মূল্যবান এ মাছটির বিলুপ্তি রোধকল্পে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নিবিড় গবেষণারএর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা লাভ করেছে। ফলশ্রুতিতে কৈ মাছের পোনা প্রাপ্তি ও চাষ পদ্ধতি যেমন সুগম হয়েছে তেমনি এ মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পথও উন্মোচিত হয়েছে।

পুকুর প্রস্তুত করন

কৈ মাছ চাষ করার জন্য সবার আগে পুকুর ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে হবে।পুকুর প্রস্তুত করার জন্য মূলত ৪ থকে ৬ মাস পানি থাকা লাগবে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে ।আর পুকুরের মাপ ২০ থেকে ৬০ শতাংশের হতে হবে। পুকুর শুকিয়ে অবাঞ্চিত মাছ ও জলজ প্রাণি দূর করতে হবে। পোনা মজুদের পূর্বে প্রতি শতাংশে ১.০ কেজি হারে কলি চুন প্রয়োগ আবশ্যক। চুন প্রয়োগের ৫ দিন পরে পোনা মজুদের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনা

পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতকৃত পুকুরে প্রতি শতাংশে ২ গ্রাম ওজনের সুস্থ-সবল ৬০০-৭০০টি পোনা মজুদ করতে হবে। পোনা মজুদের দিন থেকে ৬০% প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক পিলেট খাদ্য মাছের দেহ ওজনের ৩০-৮% হারে সকাল ও বিকালে পুকুরে ছিটিয়ে সরবরাহ করতে হবে।কৈ মাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে  প্রতি ১০ থেকে ২০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি হয়েছে কি না।এর পর খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

কৈ মাছের পুকুরে প্রচুর প্লাংটনের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, এই প্লাংটন নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রতি শতাংশে ১০ থেকে ১২টি মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ ও ৬ থেকে ৮ টি সিলভার কার্পের পোনা মজুদ করা যেতে পারে। মাছ আহরণ ও উৎপাদন আধা নিবিড় পদ্ধতিতে কৈ মাছ চাষ করলে ৪-৬ মাসের মধ্যে ৭০থেকে ৮০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

মাছ সংগ্রহের জন্য জাল টেনে বা পুকুরের সকল পানি শুকিয়ে মাছ ধরতে হবে।কেননা কৈ মাছ কাদার মধ্যে থাকে সহজে ধরা যায় না । এ পদ্ধতিতে ৫-৬ মাসে হেক্টর প্রতি ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ কেজি কৈ, ৬০০ কেজি গিফট তেলাপিয়া ও ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি সিলভার কার্প মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। আয়-ব্যয় এক হেক্টর জলাশয়ে ৫-৬ মাসে ২.৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ  টাকা বিনিয়োগ করে ৩.৫ থেকে ৪ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

উৎপাদন ভালো করতে করনীয়

কৈ মাছ চাষের জন্য জৈব-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পুকুরের চারপাসে এবং উপরের দিকে ছোট ফাঁসের জাল ঘেরে দিতে হবে।যাতে করে রোগ-জীবাণু সহজে এক পুকুর হতে অন্য পুকুরে সংক্রামিত হবে না হয়। কৈ চাষের পুকুরে গরু, ছাগলের গোসল/ধৌত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।এছাড়া কিছু নিয়ম মানতে হবে তা হলো-

  • সর্ব প্রথম কৈ মাছ চাষের জন্য পুকুরে পানির গুণাগুণ উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজনে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • তারপর প্রতি ১৫ দিন পর পর চুন ২৫০-৩০০ গ্রাম/শতাংশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
  • এরপর লবন ২০০-৩০০ গ্রাম/শতাংশ হারে প্রতি মাসে পুকুরে ব্যবহার করতে হবে।
  • ভালো মানের হ্যাচারি হতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে এবং কোনভাবেই ক্রস ব্রেড পোনা ব্যবহার করা যাবে না।
  • আগাম উৎপাদিত পোনা অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদিত কৈ পোনা চাষে ব্যবহার করা যাবে না।
  • মাছ পর্যবেক্ষণ করে মাছের সঠিক গড় ওজন নির্ধারণপূর্বক খাদ্য প্রয়োগ এবং সপ্তাহে অন্তত ১ দিন খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
  • পুকুর প্রস্তুতির পূর্বে বি-চিং পাউডার ১০০ গ্রাম/শতাংশ হারে পুকুরে প্রয়োগ করলে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস হবেও
  • চাষ কার্যক্রম শুরুর পূর্বে পুকুরের তলার জৈব মাটি ৪'-৬" উঠিয়ে ফেলতে হবে।
  • একই পুকুরে বার বার একই মাছ চাষ না কওে ফসল বহুমুখীকরণ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে হবে।
  • কৈ মাছ চাষে উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলন (Good Aquaculture Practice) অনুসরণ করতে হবে এবং প্রযুক্তি নির্ভর মাছ চাষ করতে হবে।

কৈ মাছের চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়-শেষ কথাঃ

উক্ত আর্টিকেলের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল কৈ মাছের চাষের পদ্ধতি ও উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সম্বন্ধে।আশা করি আর্টিকেলেটি পড়ে উপকৃত হবেন।এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আজকের 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url