পাবদা মাছ পকুরে চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

আপনি হয়তো পাবদা মাছ চাষ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই পাবদা মাছ চাষ সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি পাবদা মাছ  চাষ সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

পাবদা মাছ পকুরে চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

যেহেতু আপনি পাবদা মাছ চাষ সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে পাবদা মাছ চাষ কি এবং পাবদা মাছ চাষ সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা পাবদা মাছ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।

পাবদা মাছ পকুরে চাষ

বাঙালি জাতির সবছেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছ।আমরা জানি বাঙালি জাতিকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হয়।পাবদা মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ।এ মাছ সবার কাছে অনেক পরিচিত।আমরা অনেকেই পাবদা মাছ খেতে পছন্দ করি।পাবদা মাছ নদীতে  আগে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত।কিন্তু বর্তমান সময়ে এ মাছ অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।

আরো পড়ুনঃ হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

বর্তমানে পাবদা মাছ বিলুপ্ত প্রায়। নদীতে এ মাছ আগে মত আর পাওয়া যায় না। ফলে মাছটির বংশবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।আর এর মধ্যে পুকুরে চাষ করা অন্যতম মাধম।পকুরে চাষ করার মাধ্যমেই এ মাছ রক্ষা করা সম্ভব।বর্তমানে পাবদা মাছে বংশবৃদ্ধি করতে পুকুরে চাষ করা হচ্ছে।

মাছ বাছাই করা

মাছ বাছাই করার ক্ষেত্রে সবার আগে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ চিন্তে হবে। পুরুষ ও স্ত্রী মাছ চেনার উপায় পুরুষ মাছটি আকারে তুলনা মূলক ভাবে স্ত্রী মাছের চেয়ে ছোট হবে। পুরুষ মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট চাপা থাকে এবং পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খাঁজকাটা থাকে। আর স্ত্রী মাছটি আকারে তুলনামূলকভাবে পুরুষ মাছ থেকে বড় হয়। স্ত্রী মাছের প্রজনন ঋতুতে পেট ফোলা ও নরম থাকে এবং স্ত্রী মাছের বক্ষপাখনা তেমন খাঁজকাটা থাকে না।

পাবদা মাছ টেকসই করণ

পাবদা মাছ টেকসইকরণের জন্য ভ্যাক্সিন দেবার জন্য ৮-১০ ঘণ্টা আগে মাছ ধরে সে গুলোকে পুকুরে স্থাপিত গ্লাস বা বড় হাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় পর্যন্ত অক্সিজেনের জন্য মাছকে ছিদ্র যুক্ত পিভিসি পাইপের সাহায্যে ওপর থেকে অনবরত পানির ফোয়ারা দিতে হবে।

ইনজেকশন প্রদান

আমরা জানি পাবদা মাছ এর প্রজননের জন্য পিজি এবং এইচসিজি এই দুই মাধ্যম প্রজননের জন্য  ব্যবহার করা যায়। মাছকে মাত্র একবারই ভ্যাক্সিন দিতে হয়। পিজির জন্য সব ঠেকে ভালো মাত্রা হচ্ছে প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য ১২.০ মিলিগ্রাম এবং প্রতি কেজি স্ত্রী মাছের জন্য ১৮.০ মিলিগ্রাম।

পাবদা মাছে ইনজেকশন প্রদান করার সময়ন পৃষ্ঠপাখনার নিচে ৪৫ কোণে ইনজেকশন দিতে হবে। ইনজেকশন প্রদান এর জন্য ৯-১২ ঘণ্টার মধ্যে হাপাতেই প্রাকৃতিক প্রজনন ক্রিয়ার মাধ্যমে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে এবং পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে ওই ডিম নিষিক্ত করে।

পাবদা মাছের নিষিক্ত ডিম স্থানান্তর

নিষিক্ত ডিম স্থানান্তরের জন্য প্রথমেই যে কাজ আমাদের করতে হবে, মাছ গুলোডিম ছাড়ার পর যত দ্রুত সম্ভব মাছগুলোকে সতর্কতার সঙ্গে হাপা থেকে সরিয়ে ফেলতে এবং ডিমগুলোকে ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে ট্রে ও পুকুরের পানির তাপমাত্র যেন প্রায় একই থাকে।

এ জন্য প্রাথমিকভাবে পুকুরের পানি ছেঁকে ট্রেতে দেওয়া যেতে পারে। ডিম স্থানান্তর করার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেতে ওপর থেকে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ দিয়ে অনবরত পানি সরবরাহ করতে হবে যাতে ডিমগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়। এভাবে ১৬-২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

পাবদা মাছের পোনার পরিচর্যা

পাবদা মাছের পোনার সঠিক ভাবে পরিচর্যা করতে হবে।পরিচর্যা ছাড়া পাবদা মাছ ভালো ভাবে চাষ করা সম্ভব নয়।চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী দিনে ২-৩ বার করে খাবার দিতে হবে।এভাবে ৬-৮ দিন ট্রেতে প্রতিপালন করার পর পোনাগুলোকে সিস্টার্নে স্থানান্তর করতে হবে। ২.৪, ১.৩, ০.৫ ঘনমিটার সাইজের সিস্টার্নে ৩০০-৫০০টি পোনা লালন করা যাবে। পানির উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার বজায় রাখতে হবে। সিস্টার্নে ১০-১৫ দিন প্রতিপালন করার পর পোনার আকার ২-৩ সেন্টিমিটার হলে পোনাগুলোকে নার্সারি পুকুরে মজুদ করা যাবে।

পুকুরে পাবদা মাছ প্রতিপালন

পুকুরে পাবদা মাছ প্রতিপালনের জন্য পুকুরের আয়তন ঠিক রাখতে হবে।পুকুরের আয়তন হতে হবে ৬-৯ শতাংশ। পুকুর প্রস্তুতির পর শতাংশে ৬০০-৭০০টি করে পোনা ছাড়া যাবে। পোনা ছাড়ার আগে ভালোভাবে ছোট ফাঁস জাল টেনে পোকামাকড়, সাপ, ব্যান্ড ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ  শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

পুকুরে পাবদা মাছের পোনা ছাড়ার উপযুক্ত সময় সকাল কিংবা সন্ধ্যার আগে।পোনা ছাড়ার পর প্রতিদিন পোনার খাবারের চাহিদা অনুযায়ী  সম্পূরক খাবার দিতে হবে। প্রতি ১৫ দিন পর পর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

পাবদা মাছের রেনুর চাষ পদ্ধতি

পাবদা মাছের রেনুর চাষ করা অনেক সহজ।কিন্তু পাবদা মাছের রেনুর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের অনেকের সঠিক ধারণা নেই। পাবদা মাছ চাষে লাভবান হওয়ার জন্য এই মাছের রেনুর চাষ সম্পর্কে জেনে রাখা অতি জরুরী। সঠিক উপায়ে পাবদা মাছের রেনুর চাষ না করতে পারলে মাছ চাষে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। চলুন আজ জেনে নেই পাবদা মাছের রেনুর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে-

পাবদা মাছের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

পাবদা মাছের রেনুর চাষে নার্সারি পুকুরের আয়তন ১৫ থেকে ২০ শতক হতে হবে ও পুকুরের গভীরতা ৩-৪ ফুট হতে হবে।আর পুকুরের সকল আগাছা ভাল ভাবে পরিষ্কার করতে হবে ও কমপক্ষে ৮ ঘন্টা রোদ থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে।
পাবদার রেনু চাষের পুকুরের পানিতে পিএইস ৭.৫-৮.৫ এর মধ্যে থাকতে হবে।রেনু চাষের পুকুরের পানি ঘোলা বা পানিতে কোন ধরনের শেওলা থাকতে পারবেনা।

পাবদা মাছের রেনু চাষের শুরুতেই পুকুরের পানি সেঁচে কমপক্ষে ৭ দিন শুকিয়ে নিতে হবে, আর কাঁদার পরিমাণ বেশি হলে তুলে ফেলতে হবে।

প্রতি শতকে কম করে হলেও ১ কেজি চুন দিয়ে হালকা একটা নিড়ানি দিয়ে দিতে হবে।চুন দিয়ে ৪ থেকে ৫ দিন পর পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে। পূর্বে থেকে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজানো ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল, ৫০ গ্রাম চিটাগুড়ের মিশ্রনটি রোদ থাকাকালীন প্রয়োগ করতে হবে। এর ৩ দিন পর শতকে ১ কেজি ময়দা পানিতে গুলিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

পুকুরের চারদিকে নেটিং করতে হবে ও বিভিন্ন পোঁকা দমনের জন্য শতকে ৮ মিলি করে সুমিথিয়ন প্রয়োগ করবেন।সুমিথিয়ন দেওয়ার ২৪ থেকে ৩০ ঘন্টা পর শতকে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম করে পাবদার রেনু মজুদ করতে পারবেন।

পাবদা মাছের রেনু পোনার খাবার

রেনু পোনার খাবার ডিম থেকে ফোটার প্রথম দিন থেকেই শুরু করতে হ।আর রেনু পোনার জন্য খাবার সঠিক মাপ মত দিতে হয়। মূলত ট্রেতে ডিম থেকে ফোটার ২০-৩৫ ঘণ্টার মধ্যে রেনু পোনাকে প্রাথমিক খাবার দিতে হবে। প্রাথমিক খাবার হিসেবে টিউবিফিসিড ওয়ার্ম সবচেয়ে ভালো। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম ছোট বাটিতে নিয়ে কুচি কুচি করে কেটে দিতে হয়। টিউবিফিসিড ওয়ার্ম না পাওয়া গেলে পুকুর থেকে জুপ্লাংকটন ধরে সুক্ষ্ম ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ট্রেতে দিতে হবে।

৫০০ গ্রাম রেনুর জন্য দৈনিক খাবার

১-৫ দিন পর্যন্ত ৫০০ গ্রাম ময়দা ১০ টি সিদ্ধ ডিমের কুসুম একসাথে মিশিয়ে তিন বেলা ভাগ করে খাওয়াতে হবে।তারপর ৬-১০ দিন পর্যন্ত ৭৫০ গ্রাম ৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ নার্সারি ফিড সকাল ও সন্ধ্যায় ভাগ করে খাওয়াতে হবে।

১১-১৫ দিন পর্যন্ত ১০০০ গ্রাম নার্সারি ফিড সকাল অথবা সন্ধ্যায় ভাগ করে খাওয়াতে হবে।এরপর ১৬-২২ দিন পর্যন্ত ১৭৫০ গ্রাম নার্সারি ফিড সকাল অথবা সন্ধ্যায় ভাগ করে খাওয়াতে হবে।তারপর ২০-৩০ দিন পর্যন্ত ২৫০০ গ্রাম নার্সারি ফিড সকাল অথবা সন্ধ্যায় ভাগ করে খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুনঃ পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়

উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রতি ৫০০ গ্রাম রেনু থেকে ৫০থেকে ৫২ হাজার পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

মাছ সংগ্রহ করা

পাবদা মাছ মূলত ৪ থেকে ৬ বয়সে সংগ্রহ করা হয়।এ সময় মাছের ওজন ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম হয়ে থাকে।মূলত ৬ বয়সে পাবদা মাছ সংগ্রহ করা উচিত। বাজারে যখন চাহিদার পরিমান বেশি তখন তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের উচিত এই মাছ বাজারে নিয়ে যাওয়া।কেননা চাহিদা না থাকলে মাছ বিক্রি হয় না। আর আমাদের উচিত মজুদকৃত মাছের অল্প কিছুটা প্রথম পর্যায়ে বাজারে বিক্রি করে আবার বাদ বাকি মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার পর আবার কিছুতা বিক্রি করা।এ ভাবে বিক্রি করলে বেশি দাম ও লাভবান হওয়া যায়।

পাবদা মাছ পকুরে চাষ করার পদ্ধতি-শেষ কথা

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল  পাবদা মাছ পকুরে চাষ করার পদ্ধতি সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি পাবদা মাছের রেনুর চাষ পাবদা মাছের জন্য পুকুর প্রস্তুতি এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে।আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।

আরো পড়ুনঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url