সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে পড়ুন
আপনি হয়তো সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা অনেক। কিন্তু আমরা অনেকেই সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
যেহেতু আপনি সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে সজনে পাতা কি এবং সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।
সজনে পাতা
সজনে আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। সজনে বিভিন্ন ভাবে রান্না করা হয়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গার অলিফেরা । সজনের পাশা-পাশি সজনে পাতার ও অনেক উপকারিতা রয়েছে। গবেষকরা সজনে পাতাকে সুপার ফুড বলে থাকেন। সজনে পাতা ডায়াবেটিস রোগির জন্য অনেক উপকারি।ডায়াবেটিস রোগির সজনে পাতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি ভাবে নারীর দাঁতের যত্ন নিবেন পড়ুন
মিরপুর ইসলামী ব্যাংক অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমান, সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন।তিনি বলেন সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এগুলো ছাড়াও প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটও আছে এতে। অনেকগুলো পুষ্টি একসঙ্গে থাকার কারণে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতা থেকে পাওয়া যায়ঃ
- শর্করা ৮.২৮ গ্রাম
- ফাইবার ২.০ গ্রাম
- স্নেহ ১.৪০ গ্রাম
- প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম
- ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম
- লৌহ ৪.০০ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ প্রায় ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম
- ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম
সজনে পাতার উপকারিতা
আমরা জানি সাজনে বা মরিঙ্গা পাতা সাস্থের জন্য অনেক উপকারি। সাজনে বা মরিঙ্গা পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এগুলো ছাড়াও প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটও আছে।
আরো পড়ুনঃ তুলসী গাছ ও নিম গাছ এর ঔষধি গুণাগুন
- সজনে পাতা রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।
- হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে ও ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
- প্রদাহনাশক হিসাবে কাজ করে অর্থাৎ শরীরের বিভিন্ন ব্যথা দূর করে।
- পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন খাবার সহজে হজম না হওয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে থাকা, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় অনেক কার্যকারী। সজনে পাতায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা দাঁত ও হাড়ের গঠনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য সাহায্য করে।
- সজনে পাতাতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়তে দেয় না।
- সজনে পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- সজনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যৌগ রয়েছে। ত্বকের সংক্রমণ, মূত্রনালী সংক্রমণ এবং হজমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এটি।
সজনে পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া উপায়
- সাজনেপাতা শাকের মতো ভেজে খাওয়া যেতে পারে বা সেদ্ধ করে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তবে রান্না করলে ভিটামিন সি অনেকাংশে কমে যায়।
- প্রাকৃতিক ভাবে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে খাওয়া যেতে পারে।
- ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে।
- চায়ের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- অতিরিক্ত কিছু দেহের জন্য ভালো নয়। তাই সজনে পাতার গুঁড়া বা রস নিয়মিত না খেয়ে বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। ১০-১৫ দিন খাওয়ার পর কিছু দিন বিরতি দিয়ে খেলে ভালো হয়।
সতর্কতা
সজনেপাতার অনেক উপকারিতা থাকলে ও এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কালো জিরার ও জিরা ঔষধি গুনাগুণ
- সজনেপাতা অতিরিক্ত খাওয়া হলে বমি বমি ভার ও পেটের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- ব্লাডপ্রেসারের ওষুধ খাওয়ার পাশা-পাশি নিয়মিত সজনেপাতার গুঁড়া বা রস খেতে থাকলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।
- সজনেপাতা সংলগ্ন ডাল গুলো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ডাল গুলোতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা যেগুলো আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে।
কারা সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন
সাধারনত গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। সজনের পাতা ডালে যে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে সেটি গর্ভাবস্থাতার সময় শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে অনেক। সজনে পাতা গুঁড়া বা রসের ক্ষেত্রে এ ডাল মিশ্রিত থাকতে পারে। তাই গর্ভকালীন এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো।
আরো পড়ুনঃ আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগীদের অনেকে মনে করেন, শুধু সজনে পাতা খেলে ডায়াবেটিস অর্থাৎ রক্তের সুগার ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু বিষয়টি আসলে এরকম নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি সজনে পাতার গুঁড়া খেলে এটি সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। যাদের প্রি-ডায়াবেটিস তারা সজনে পাতা খাওয়ার মাধ্যমে এবং সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেহে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
হাইপোথাইরয়েড বা কিডনি জনিত সমস্যা আক্রান্তরা সজনে পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা হাইপোথাইরয়েড বা কিডনি জনিত সমস্যা আক্রান্তরা সজনে পাতাকে একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করবেন না।
সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা-শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল সজনে পাতা বা মরিঙ্গার উপকারিতা সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি সজনে পাতা বা মরিঙ্গার পাতা কি সে সম্পর্কে । আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।
আরো পড়ুনঃ কিডনির রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপায় ও ভেষজ উদ্ভিদের কার্যকারিতা
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url