ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
প্রিয় পাঠক আপনি কি ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন । কেননা এ আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করেছি ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।সাথে আর বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি ডালিয়া ফুলের সৌন্দর্য ও কি ভাবে ডালিয়া ফুল সংগ্রহ করা যায়।
ডালিয়া ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।কেননা এ আর্টিকেলটি মধ্যে ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ করলে আর্টিকেলটি পড়লে আশা করি অনেক উপকৃত হবেন। আশা করি ডালিয়া ফুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকবেন।
ডালিয়া ফুল
ডালিয়া ফুল সবার কাছে পছন্দনীয় তার সৌন্দর্যের কারনে।এ ফুল দেখতেও অনেক সুন্দর। প্রধানত শীতকালীন মৌসুমে ফুলের মধ্যে ডালিয়া অন্যতম ফুল । ডালিয়া ফুলের মন মাতানো রং সবাইকে আকৃষ্ট করে থাকে । এ ফুলের বিভিন্ন ধরনের রং হয়ে থাকে।বিশেষ করে লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, বেগুনি, চকলেট প্রভৃতি রঙের ডালিয়া ফুল দেখতে অনেক বেশি ভাল লাগে।
ডালিয়া ফুলের চাষ করা অনেক সহজ। এ ফুল টবেও চাষ করা যায়।এর কাণ্ড ফাঁপা, ফুল গুলো বড় ও ফুলগন্ধহীন। ইহার উৎপত্তি মেক্সিকো। অন্যান্য ফুলের চেয়ে ডালিয়া ফুলের দাম বেশি। প্রতিটি ষ্টিক বাজারে খুচরা ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হয়। সারা দেশে বর্তমানে অনেক ফুল উৎপাদন করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে ডালিলা ফুল চাষ করা হয়। এ ফুল চাষ করার ফলে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। বাজারে ডালিলা ফুল ভালো দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে।এ ফুল সবচেয়ে বেশি চাষ হয় যশোর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ,জয়পুরহাট, পাবনা, গাজীপুর, পিরোজপুর ও খুলনা জেলায়। ডালিয়া ফুল সবার কাছে অনেক পছন্দের ফুল।
ডালিয়া ফুলের চাষ পদ্ধতি
ডালিয়া ফুলের চাষ করা অনেক সহজ। এ ফুল জমিতে ও টবে সব জাইগাতে চাষ করা যায়।বিশেষ করে শীতকালীন মৌসুমে এ ফুল চাষ করা হয়ে থাকে।
জলবায়ু
ডালিয়া ফুল প্রধানত শীতকালে চাষ করা হয়। এ জন্য তাপ-মাত্রা হলো ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উজ্জ্বল সূর্যালোক ও হালকা বৃষ্টিপাতেও প্রয়োজন হয়।কম আলোতে ডালিয়ার গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের উজ্জ্বলতা কম হয়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, গরম, বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা তিকর।তাই বলা যায় আবহাওয়া ভালো হওয়া লাগবে ডালিয়া ফুলের চাষের জন্য।
মাটি বা জমি নির্বাচন
ডালিয়া ফুলের চাষের জন্য সঠিক মাটি নির্বাচন করতে হবে।তা না হলে ফুলের চাষ ভালো হবে না। ডালিয়া ফুলের চাষের জন্য মাটি সুনিষ্কাশিত উর্বর দো-আঁশ প্রকৃতির সামান্য কারীয় (পিএইচ ৭-৭.৫) মাটি হলে ডালিয়ার চাষ ভালো হয়।
ডালিয়া ফুলের জাত
পৃথীবিতে হাজার হাজার জাতের ডালিয়া ফুলে আছে।এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের ডালিয়া ফুল চাষ করা হয়।এ ফুলে গুলো মূলত লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, বেগুনি, চকলেট প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে। যেমন,
- সিংগল ডালিয়া কমেট
- স্টার ডালিয়া হোয়াইট ষ্টার
- অ্যানেমনি ডালিয়া।
- কলারেট ডালিয়া স্টারলেট কুইন
- ডেকোরেটিভ ডালিয়া নিউবাই
- ডবল শো ফ্যান্সি মার্লিন
- পমপেন ডালিয়া রোজিয়া
- ক্যাকটাস ডালিয়া ডোরিস ডে
- বেঁটে ডালিয়া হানি
- পাঁচ মিশালি ডালিয়া জিরাফ
চারা উৎপাদন বা বংশবিস্তার
বীজ, মূলজ কন্ড ও শাখা কলম বিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে ডালিয়া বংশ বিস্তার করে। বীজের চারায় মাতৃ গাছের গুণা গুণ থাকে না, অনেক সময় ডবল শ্রেণির বীজে জন্মানো গাছে সিঙ্গল শ্রেণির ফুল ফোটে ও ফুলের বর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই বীজের চারার ব্যবহার অত্যন্ত কম।প্রয়োজনে আশ্বিন-কার্তিক মাসে স্বাভাবিক নিয়মে চারা উৎপাদন পূর্বক ২৫-৩০ দিন বয়সে জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে। মূলজ কন্দ ও ডাল কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো:
ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি পদ্ধতি বা নিয়ম
ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি করা যায় প্রধানত দুটি ভাবে ১.মূলজ কন্দ থেকে চারা তৈরি ২ .শাখা কলম থেকে চারা তৈরি।
মূলজ কন্দ থেকে চারা তৈরি
ডালিয়া গাছের গোড়ায় জন্মানো মূলজ কন্দ পরবর্তী বছর চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।ফাল্গুন ও চৈত্র মাসের দিকে ফুল শেষে পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে আসলে কন্দ পরিপক্ক ও সংগ্রহ উপযোগী হয়। মাটির নিচ থেকে অত অবস্থায় কন্দ তুলে দু একদিন বাতাসে শুকিয়ে আলুর ন্যায় শুষ্ক বালিতে সংরক্ষণ করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ গোলাপ ফুল কি ভাবে টবে চাষ করা যাায় জানুন
অতঃপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কন্ড গুলোকে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালি মিশ্রিত বীজ তলা বা টবে রোপণ করে সামান্য পানি সিঞ্চন করলে আমরা কয়েক দিনের মধ্যে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়। চারা ২-৫ সে.মি. লম্বা হলে মূলজ কন্দটিকে চারাসহ কেটে টুকরা করে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।
উল্লেখ্য যে, শাখা কলমের গাছের চেয়ে মূলজ কন্দের গাছে ২-৩ সপ্তাহ আগে ফুল ফোটে। তাছাড়া বড় টবের চেয়ে ছোট টবে (১২-১৫ সি.মি.) মূলজ কন্দ ভালোভাবে গড়ে উঠে। সুষম মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে কন্দের গঠন ও সংরক্ষণে কোন অসুবিধা হয় না।
শাখা কলম থেকে চারা তৈরি
আমরা জানি শাখা কলম থেকে চারা তৈরি জন্য আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার শাখা কলম করা যায়। আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে মূলজ কন্দে জন্ম হওয়া কচি চারা বা শাখা থেকে গিঁট সহ কেটে বা ভেংগে নিতে হয়। তাছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সি.মি. লম্বা পুষ্ট শাখাও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে।
আবার এরপরে পরে শাখা গুলোকে বালি ভর্তি টবে কিংবা জমিতে পুঁতে প্রয়োজন মত হালকা সেচ দিলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে শাখায় শিকড় গজায়।এরপর শিকড় গজানোর পর কলমগুলোকে সাবধানে তুলে পলিথিন ব্যাগে বা ছোট টবে ৫০% গোবর মিশ্রিত মাটিতে লাগাতে হয়। ৮-১০ দিনের মধ্যে চারা সতেজ হয়ে উঠলে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ
ডালিয়া ফুল চাষ করার জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ করার নিয়ম ডালিয়ার মাটি গভীর ভাবে নরম ও ঝুর ঝুরে করে তৈরি করতে হয়। প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জমিতে ২০০ কেজি গোবর/ কম্পোষ্ট, ৩ কেজি কাঠের ছাই (দেড় কেজি এম পি) ও ২ কেজি হাড়ের গুঁড়ো (দু'কেজি টি এস পি) সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়।
টবে চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি, বালি, কাঠের ছাই, পাতা পচা সার, গোবর,খৈল ও হাড়ের গুঁড়ো মিশিয়ে সার মাটি তৈরি করতে হয়। মিশ্রণের বা প্রয়োগের ২০ দিন পর সারের রাসায়নিক বিক্রিয়া শেষ হলে কেয়ারীতে প্রয়োগ বা টবে সার মাটি ভর্তি করে চারা রোপণের জন্য তৈরি করতে হয়।
চারা লাগানোর দু'সপ্তাহ পর থেকে প্রতি ১০ দিনে একবার করে পটাশ বা কাঠের ছাই এবং পানিতে পচানো খৈল গোলা তরল সার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হয়। তাছাড়া কুঁড়ি আসার পর প্রতি গাছের গোড়ায় ৩ গ্রাম এম.পি. ২ গ্রাম টি.এস.পি ও ১ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে ফুলের আকার বড় হয় ও বর্ণের ঔজ্জল্য বাড়ে। প্রয়োজনে প্রতি গাছে ৫ গ্রাম (২ চা চামচ) করে গুঁড়ো চুন প্রয়োগ করে মাটির অম্লত্ব হ্রাস করা যেতে পারে।
তাছাড়া অনেক সময় গাছের অতিরিক্ত বৃদ্ধি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ ক্ষেত্রে ফুলকুঁড়ি জন্মানোর ২-১ সপ্তাহ আগে প্রতি গাছের গোড়ায় ৫-৭ গ্রাম হারে খাবার লবণ উপরি প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়। ৬. চারা রোপণ ও পরিচর্যা: জমিতে জাত ভেদে ৬০-৯০ সে.মি. দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে আর প্রতি টবে একটি করে চারা লাগাতে হয়। টবের আকার ২৫ সে.মি. হলে ভালো হয়।
সেচ পদ্ধতি
সেচ যে কোন ফুল গাছের জন্য জরুরি।তাই চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমন ভাবে সেচ দিতে হয় যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে ও জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হয়। তাছাড়া গাছের পাতায় মাঝে মাঝে পানি সিঞ্চন করা ভালো। ফুল কুঁড়ি জন্মানোর পর কম পরিমাণে ও ঘন ঘন সেচ দিলে ফুল বড় হয়।
ডালিয়া ফুল গাছের প্রধান কান্ড বেশি লম্বা হলে আগা কাটে দিতে হয়। এতে কান্ডে প্রচুর শাখা-প্রশাখা গজায়। এগুলো থেকে ৪-৫টি শাখা-প্রশাখা রেখে বাকিগুলো কচি অবস্থায় ছাঁটাই করলে গাছ সবল ও ঝোপালো হয়। গাছ বাড়ার সংগে সংগে এতে ঠেস দিতে হয়। ফুলের আকার বড় করার জন্য প্রতি শাখায় ১ টি করে কুঁড়ি রেখে বাকিগুলো ভেংগে দেয়া যেতে পারে।
ফুল সংগ্রহ করা
ডালিয়া ফুল সংগ্রহে করার জন্য করনীয় এ ফুল জমিতে বা বড় টবে লাগানোর জন্য ৫৫ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ফুল ফোটে। তবে গাছের অংগ ছাঁটাই করা হলে ফুল ধরা কিছুটা পিছিয়ে যায়। ফুল সম্পূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হবার কিছু আগে সন্ধ্যার দিকে ধারালো ছুরি দিয়ে ডাঁটি সমেত ফুল কেটে সংগ্রহ করা উত্তম।
যদি ডাঁটি সহ ফুল কাটা হয় তাহলে ফুল অধিক সময় থাকে। অতঃপর ফুলে পানি ছিটিয়ে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠানো উচিত। ফুল তোলার পর গাছের নিচ দিকের ডালে ফুল ফোটে তাই একবারে গাছ কাটে ফেলা অনুচিত।
ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ-শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি সাথে আর বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি ডালিয়া ফুলের চারা তৈরি ও চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাথে আর বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি ডালিয়া ফুলের সৌন্দর্য ও কি ভাবে ডালিয়া ফুল সংগ্রহ করা যায়।আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url