হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

আপনি হয়তো হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

যেহেতু আপনি হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ কি এবং হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।

হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ

হাইব্রিড মাগুর মাছের চাষ আমাদের দেশে প্রায় সব অঞ্চলেই হয়ে থাকে। হাইব্রিড মাগুর মাছ বৃহ দাকারের হয়। এই মাছ মাংসাশী রাক্ষুসে। খুব দ্রুত এদের দেহের বৃদ্ধি হয়। মাগুর চাষের পুকুরে অন্য মাছ রাখা বিপজ্জনক। আমাদের বাড়ির আশ পাশের ছোট পুকুর কিংবা জলাশয়ে মাগুর মাছ চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষে আমাদের করণীয় সম্পর্কে-

চাষের জলাশয়ের পরিবেশ

পুকুর বা জলাশয়ের ধার

আমাদের দেশে চাষের জন্য জলাশয়ের ধার বেশ চওড়া করা দরকার হয়ে থাকে। মাগুর মাছের বুকে হেঁটে বাইরে চলে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। তাই পুকুরের ধার উঁচু করার ও দরকার যাতে পানি থেকে অন্তত এক ফুট উঁচু থাকে অর্থাৎ ওই জলাশয়ে সর্বোচ্চ পানির তল যত হওয়ার সম্ভাবনা তার থেকে অন্তত একটু বেশি উচ্চতা থাকে। 

বর্ষা তে যদি বড় মাছ থাকে ওই জলাশয়ে, তবে জাল দিয়ে বা বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের ব্যবস্থা রাখা দরকার যাতে মাছ অন্যত্র চলে যেতে না পারে। পুকুরের পাড় প্রায়শই ইঁদুর বা সাপের বস বাসের জন্য গর্ত থাকে। এ গুলি থেকে রেহাই পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের পাড়ের ঢাল থাকা বাঞ্ছনীয়। এই ঢাল বাইরের দিকে ৩ঃ১ এবং ভিতরের দিকে ৩ঃ১ থেকে ৪ঃ১ প্রয়োজন।

জলজ আগাছা নিয়ন্ত্রণ

পুকুরের সমস্ত আগাছা তুলে ফেলে উচিত বা মাগুরমাছের চাষ করার জন্য পুকুর আগাছা শূন্য হওয়া দরকার। বিশেষ করে পুরাতন জলাশয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আগাছায় আক্রান্ত থাকে। মাগুরমাছ উদ্ভিদভোজী নয়। তাই ছোট বড় কোনও উদ্ভিদই এদের খাদ্য নয়।

আরো পড়ুনঃ  শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

পরন্তু চলা ফেরায় এরা ব্যাঘাত ঘটায়। এ ছাড়া এরা পানির নীচের দিকে থাকে। পানিতে সাধিক আগাছা থাকলে পানির নীচর সরে আলো বাতাস ও অধিক আগাছা থাকলে পানির নীচের স্তরে আলো বাতাস প্রবেশে বাধা দেয়।

অবাঞ্ছিত মাছের দমন

জলজ পোকা যদি পুকুরের পানিতে থাকে তাহলে মাছের বাড়তে ব্যাঘাত ঘটায়। মাছের খাদ্য বা প্রাকৃতিক অনেক দান থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বার বার জাল টেনে এই গুলিকে নির্মূল করা উচিত। প্রয়োজনে পানি শুকিয়ে গেলে অথবা পানি কমে গেলে পুকুরে মহুয়া খোল প্রয়োগ করে এ গুলিকে দমন করা যেতে পারে। 

মহুয়া খৈল প্রয়োগে সমস্ত ছোট প্রাণীর মৃত্যু ঘটে স্যাপোলিন নামক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থের জন্য হয়ে থাকে। এই রাসায়নিক ক্রিয়ার প্রভাব মহুয়া প্রয়োগের ১২ ১৫ দিন পরে আর থাকে না। এই খৈলই পরে মাছের সোজাসুজি খাবার হিসাবে এবং মাছের প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনে সহায়ক হিসাবে কাজ করে।

মাছের চারা মজুত

মাগুর মাছের চারা প্রাকৃতিক নিয়মে পাড়া ডিম হতে বাচ্চা হওয়ার পর সংগ্রহ করা হয়। বর্ষা কালে খাল, বিল, বাওড়, নালা বিভিন্ন জলাশয় হতে পরিণত বয়সের প্রজননক্ষম-প্রজনেনচ্ছ মাছ সুযোগ পেলে বেরিয়ে এসে ধান ক্ষেত বা আগাছা পূর্ণ অগভীর জলাশয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ডিম পাড়ে। 

নিষিক্ত ডিম হয় এবং পরে তার থেকে বাচ্চা পরিনিত হয়। এ রকম জলাশয় থেকে সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে এইচারা সংগ্রহ করা হয়। এই সময় এদের ওজন প্রায় ৭ থেকে ১০ গ্রাম মতো হয়ে থাকে। এই পরি মাপের চারাই পালন ও মজুত পুকুরে চালান করে দেশি মাছের চাষ করা হয়।

আরো পড়ুনঃ পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়

প্রাকৃতিক নিয়মে মাগুরমাছ এর কোন ও অভাব হওয়ার কারণ ছিল না। কিন্তু উপযুক্ত পরিণত প্রজনন ক্ষম মাছের সংখ্যা নানা কারণে পর্যাপ্ত না হওয়া, উপযুক্ত জলাশয়ের অভাব ও সর্বো পরি ধান ক্ষেতে এবং কৃষি ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য দেশি মাগুর মাছের চারা উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এর সমাধান সূত্র প্রণোদিত প্রজননের মাধ্যমেই খুঁজতে হবে।

চারা মজুত পদ্ধতি

উপযুক্ত জলাশয় তৈরির পর দেখতে হবে যেন পানিতে আগাছা, আমাছা, মাছ খেকো বড় মাছ না থাকে। পানির রঙ হালকা কালো। মহুয়া খোল প্রয়োগের ২০/২১ দিন পরে এবং অন্যান্য জৈব সার প্রয়োগের অন্তত ৭ দিন পর মাছের চারা ছাড়া উচিত। এই সময় চারা মাছের দৈর্ঘ্য ৭-১০ সেমি (৩-৪ ইঞ্চি) যার ওজন ৮/১০ গ্রাম হবে। মজুত কাল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে।

মাছ চাষে পরিচর্যা

মাগুরমাছ জলজ উদ্ভিদ কণায় (ফাইটো প্ল‍্যাঙ্কটন) খুব উৎসাহী নয়। তাই দেশি মাগুর চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগের তেমন প্রয়োজন নেই। তবে সাধারণ কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রণ থাকলে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়, অন্যথায় নয়। মাগুর মাছ চাষে প্রতি মাসে বিঘা প্রতি ১০০ ১২৫ কেজি (৭৫০-৮৫০ কেজি হেক্টর প্রতি) কাঁচা গোবর প্রয়োগ করতে হয়। 

এই গোবর মাগুর মাছ সোজা সুজি খাবার হিসাবে নেয়। এ ছাড়া পানিতে সূক্ষ্ম প্রাণী কণার জন্ম হয়, যে গুলি মাগুর মাছের প্রিয় খাদ্য। তাই নিয়ম করে মাগুর মাছ চাষে কাঁচা গোবর প্রয়োগ প্রয়োজন। গোবর প্রয়োগের ফলে এবং নানা বিধ কারণে পানি দূষণের প্রবণতা থাকে। এ ছাড়া চুন মাছের খাদ্য হিসাবে প্রয়োজন। 

তাই কাঁচাগোবর প্রয়োগের অন্তত ৭-১০ দিন বাদে বিঘা প্রতি ৮-১০ কেজি কলিচুন (৬০-৭৫০ কেজি হেক্টরে) প্রয়োগ ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতি মাসে অন্তত এক বার টানা জাল টেনে অথবা খ্যাপলা জালের সাহায্যে মাছ ধরে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, তাদের বৃদ্ধির গতি ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে, যাতে মাছ সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকে প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে।

আরো পড়ুনঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায় 

এ ছাড়া মাঝে মধ্যে পুকুরে জাল টানলে মাছের ব্যায়াম হবে যা তাদের বৃদ্ধিতে সহায়ক। গ্রীষ্মের সময়, বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসে জলাশয়ের পানি একে বারে কমে যায়। তখন পানিতে শ্যাওলার আধিক্য ঘটে যা মাগুরমাছ চাষে বিঘ্ন ঘটায়। এই শ্যাওলা নির্মূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ লাগিয়ে এগুলি নানা উপায়ে তুলে ফেলতে হবে। 

তুঁতে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া এই সময় পানির উত্তাপ ভীষণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে মাছ অস্বস্তিতে থাকতে পারে। অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে পারে। মানুষ (চোর) বা অন্য মৎস্যভুক প্রাণীর পেটে যেতে পারে। তাই মাঝেমাঝে পানির মধ্যে ইতম্ভত গর্ত (এক বর্গমিটার বা ততোধিক মাপের এবং যথাসম্ভব গভীর) তৈরি করা যেতে পারে। 

যেখানে মাছ গুলি প্রয়োজনে অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় নিতে পারে। মাঝেমাঝে তালপাতা পুঁতে রাখলে এবং পানিতে ফেলে রাখলে ওই স্থান অপেক্ষা কৃত কম উত্তপ্ত হবে, যেখানে মাছের অস্থায়ী আশ্রয় হতে পারে। মাছের অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখলে প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাছের খাদ্য উপাদান

হাইব্রিড মাগুরমাছ এর জন্য পরি পূরক খাদ্যের উপাদান গুলি হল উদ্ভিদ উপাদান, প্রাণীজ উপাদান, অন্যান্য উপাদান। খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, ওষুধ ইত্যাদি।

উদ্ভিদ উপাদান

চালের গুঁড়ো (খুদ), চালের কুঁড়ো, ডালের গুঁড়ো, সয়াবিন, বাদাম গুঁড়ো বা খোল, সরষের খৈল ইত্যাদি। তণ ঢুল জাতীয় খাবার শর্করা ও তৈল বীজ বা খৈল প্রোটিন ও তৈল জাতীয় খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ। এ ছাড়াও ভিটামিন ও অন্যান্য খাদ্য উপাদান এতে কম বেশি বর্তমান থাকে।

প্রাণীজ উপাদান

রেশম কীটের মুককীট, কেঁচো, শুটকি মাছের গুঁড়ো, শুকনো চিংড়ির গুঁড়ো, মাংসের কুচি, গেঁড়ি, গুগলি শামুকের মাংসল অংশ, কাঁচা গোবর, গোবর গ্যাস প্ল্যান্টের পরিত্যক্ত দ্রব্য ইত্যাদি। এগুলি অধিকাংশ প্রোটিন, ভিটামিন, তৈল ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ।

অন্যান্য উপাদন

যেমন বাড়ির খাবারের যে কোনও পরি ত্যক্ত মাছ মাংসের অংশ, মাছ, মুরগি, ছাগল ইত্যাদির জীবিত বা মৃত অবস্থার পরি ত্যক্ত অংশ যেমন মল, রক্ত, চামড়া, নাড়ি ভুঁড়ি ইত্যাদি। এ সবই মাগুর মাছের ভীষণ প্রিয় এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান ।

আহরণ বা মাছ ধরা

হাইব্রিড মাগুরমাছ ধরার জন্য ছাঁকনিজাল অথবা খ্যাপলাজাল ব্যবহার করা হয়। খ্যাপলাজাল ইতস্তত ফেলে মাছ ধরা হয়। স্বল্প পরিমাণ মাছের প্রয়োজনে খ্যাপলাজাল দিয় ধরা হয়ে থাকে। যখন পরিমাণে বেশি মাছ ধরার পরিকল্পনা থাকে বা প্রয়োজন হয় তখন ছাঁকনি জালের ব্যবহার করা হয়। এই জাল জলাশয়ের পাড়ের দুই প্রান্ত দিয়ে মানুষ টেনে নিয়ে যায়। 

যে হেতু মাগুর মাছ পানির নিম্ন স্তরে বসবাস কারী এবং নীচের পাঁকের মধ্যে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে তাই জালে সবমাছ ধরা যায় না। মাগুরমাছ ধরার উৎকৃষ্ট সময় হল জলাশয়ের পানি কমে আসে। খুব অল্প পরিমাণে বা চাষির নিজের খাবার জন্য ।

অনেক সময় কলসি বা ঝুড়িতে গোবর,খৈল বা সিদ্ধ খুদ দিয়ে ফেলে রাখলে মাগুরমাছ ওর ভিতর ঢুকে থাকে এবং ধরা পড়ে। সমস্ত মাছ ধরার প্রয়োজন বা পরিকল্পনা থাকলে জলাশয়ের সব পানি সেঁচে ফেলে পানি শূন্য করে ধরাই সব থেকে সুবিধা এবং লাভ জনক। 

কিভাবে হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করবেন 

জয়নাল আবেদীন মাছ চাষ করছেন। তারপর ও প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না বিভিন্ন কারণে। তা ছাড়া পুকুরে মাছ চাষ করার মতো জায়গা তো সবার বাড়িতে নেই। শাক সবজি, ফল মূলের মতো চৌবাচ্চায় মাছ চাষ করা যায়। চৌবাচ্চায় মাছ চাষে যেমন বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই, তেমনি ঘরে বসে টাটকা মাছ তো খাওয়া যাবেই, পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে। 

গবেষণার মাধ্যমে ইতি মধ্যে দেশীস্ত্রী-মাগুর ও আফ্রিকান পুরুষ- মাগুরের সংকরায়ণের মাধ্যমে অধিক ফলন শীল সংকর মাগুর উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ মাছের অনেক বেশি গুণ- তিন মাসেই পূর্ণাঙ্গ দেশী মাগুরের আকার, প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম ওজন হয়। 

সংকরজাতের মাগুর দেখতে দেশী মাগুরের মতো এবং খেতে সুস্বাদু। মাত্র ২ বর্গ মিটারের ২.৫ থেকে ৩ ফুট গভীর চৌবাচ্চায় প্রতি বর্গ মিটারে ৫-৬ ইঞ্চি সাইজের ৪০ টি মাগুর মাছের পোনা ছাড়তে পারেন। ফিশমিল, ব্লাডমিল, খৈল, চালের কুঁড়া, আটা মিশ্রিত খাবার দৈনিক পাঁচ ভাগ হারে দিলে প্রতি বর্গ মিটারে তিন মাসে প্রায় ৫০ কেজি মাগুর উৎপাদিত হতে পারে। 

হাইব্রিড মাগুরমাছ সঠিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত আলোবাতাস দরকার হয়ে থাকে, তাই রোদের তাপে চৌবাচ্চার পানি যাতে গরম না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রতি দিন চৌবাচ্চার পানি নেড়েচেড়ে দিতে হবে। যাদের জায়গা আছে তারা বাড়ির আশপাশে হাইব্রিড মাগুরের চাষ করতে পারেন। 

আর শহরে যাদের জায়গা স্বল্পতা তারা চাইলে বাসার ছাদে বা বাসার পাশের জায়গায় ৩ ফুট উঁচু চৌবাচ্চা তৈরি করে তাতে মাগুরমাছ অল্প পানিতে এবং বছরে তিন বার এ মাছের চাষ করা যায়। শহর অঞ্চলে এসব মাছ কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ৭০-১৮০ টাকা। 

হাইব্রিড মাগুরপোনা দেশের সর্বত্র পোনা বিক্রয় কেন্দ্রে পাওয়া যায়। আকৃতির ওপর এর দাম নির্ভর করে, যেমন-এক থেকে দুই ইঞ্চি আকৃতির মাছের পোনা ২-৬ টাকা করে। আবার রক্ষণা বেক্ষণ খরচ বেশি নয়। যার ফলে চার মাস পালন করলে লাভ পাওয়া যাবে।

মাগুরমাছ এর পোনা উৎপাদন এছাড়া এ কাজে যখন অভিজ্ঞ হবেন, তখন নিজেই পোনা উৎপাদন করতে পারবেন। আর পোনা উৎপাদন করলে দু ভাবে লাভবান হবেন। প্রথমত, পোনা বিক্র করে; দ্বিতীয়ত, মাছ বিক্রি করে। সাধররণত মে থেকে আগস্ট মাস মাগুরমাছ প্রজনন কাল। 

এ প্রজনন ঋতু তে ইনজেকশন দেওয়ার ৬ ঘন্টা আগে পরি পক্ক স্ত্রী দেশী মাগুর ও পুরুষ আফ্রিকান মাগুর পুকুর থেকে ঘরতে হবে। স্ত্রী দেশী মাগুরের পেট ডিমে ভর্তি ও ফোলা থাকে। জননেন্দ্রিয় গোল, লালচে ও ফোলা হয়ে থাকে। পেটে চাপ দিলে দু-একটি ডিম বের হয়ে আসে। আফ্রিকান পুরুষ মাছের জন নেন্দ্রিয় লম্বাটে ও সূচালো হয়ে থাকে।

মাছের পৃষ্ঠ দেশের পেছনের দিক থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে ইনজেকশন দেওয়া হয়। ইনজেকশন দেওয়ার ১৪-১৮ ঘন্টার মধ্যে স্ত্রী মাছের পেটে চাপ দিয়ে পরিষ্কার ট্রে বা থালায় ডিম বের করে নেওয়া হয়। এ সময় পুরুষ মাছের পেট কেটে অণ্ডকোষ বের করে কুচি কুচি কেটে লবণ পানিতে দ্রবণ তৈরি করা হয়।

সং গৃহিত ডিমের ওপর অণ্ড কোষ দ্রবণ ঢেলে পাখির পালক দিয়ে ডিম নিষিক্তকরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে রেণু পোনা বের হয়। রেণু পোনাকে তিন-চার দিন যন্ত নিলে হয় ধানী পোনা, আস্তে আস্তে তা পোনায় রূপান্তর হয়।

প্রথম দিকে আমাদের দেশে চৌবাচ্চা তৈরি ও অন্যান্য কারণে খরচ বেড়ে যাতে পারে।এ জন্য পরের সময়ে অভিজ্ঞতার কারণে লাভ বেশি হয়ে থাকে। নিজের উদ্যোগে চৌবাচ্চায় মাছ চাষ পরিবারের মাছের চাহিদা মেটানোর পাশা পাশি বিক্রি করে কমবেশি আয় ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। চৌবাচ্চায় মাছ চাষে বাড়তি কোন শ্রমের প্রয়োজন হয় না। একই সাথে পরিবারের সবাই এ বিষয়াদি হাতে কলমে শিখতে আগ্রহী হয়।

হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ-শেষ কথাঃ

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ ও চৌবাচ্চায় সহজেই মাগুর মাছ চাষ করবেন এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url