শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

আপনি হয়তো শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

যেহেতু আপনি শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে শিং ও মাগুর মাছ চাষ কি এবং শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা শিং ও মাগুর মাছ চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।

শিং ও মাগুর মাছ

আমাদের দেশে শিং-মাগুর অত্যন্ত সুস্বাদু। শিং-মাগুর পুষ্টিকর মাছ হিসেবে বহুল আলোচিত এবং এ মাছ মানব দেহের রক্তের তৈরি করতে সহায়তা করে । কিন্তু জলজ পরিবেশের আনুকূল্যের অভাব এবং অতিরিক্ত আহরণ জনিত কারণে এসব মাছ অধুনা বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।

 আরো পড়ুনঃ বাইম মাছ চাষ করার উপায় - লাভবান হওয়ার পদ্ধতি পড়ুন

শিং-মাগুর মাছ বিলুপ্ত থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করে বর্তমান সময়ে আশানুরুপ সাফল্য অর্জন করেছে। ফলে এ জাতীয় মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনা ঘাটনো সম্ভব হয়েছে।শিং-মাগুর সুসাস্থের জন্য অনেক উপকারি ।

শিং-মাগুর মাছ কেন চাষ করব

  • শিং-মাগুর মাছ অত্যন্ত পুষ্টি কর ও সুস্বাদু।
  • শিং-মাগুর ও অধিক সংখ্যক মাছ এক সাথে চাষ করা যায়।
  • শিং-মাগুর মাছ স্বল্প বা কম পানিতে নিরাপদে চাষ করা সম্ভব।
  • শিং-মাগুর মাছ বাজারের অন্যান্য মাছ এর চাইতে এ মাছের চাহিদা ও বাজার মূল্য অনেক বেশি হয়ে থাকে।
  • শিং-মাগুর মাছ অনেক সময় বেঁচে থাকায় ও বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহন এরা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। ফলে, জীবন্ত অবস্থায় বাজার জাত করা যায়।
  • শিং-মাগুর মাছ কৃত্রিম কৌশল উদ্ভাবনের ফলে বর্তমান সময়ে পর্যাপ্ত  পোনা উৎপাদন সম্ভব।
  • রোগীর খাবার হিসেবে  শিং ও মাগুর মাছের চাহিদা ব্যাপক।

শিং ও মাগুর মাছের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো-

শিং মাছ আবাসস্থল

আমাদের দেশে শিং মাছ পাওয়া যায় খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-দীঘি, ডোবানালা, প্লাবনভূমি ইত্যাদি জাইগায়। এ মাছ এঁদো, কর্দমাক্ত মাটি, গর্ত, গাছের গুঁড়ির তলা ইত্যাদি জায়গায় এরা সহজেই বসবাস করতে পারে।

শিং মাছ আগাছা, কচুরিপনা, পচা পাতা, ডালপালা ঘেরা জলাশয়ে বাস করতে এদের আদৌ কোন সমস্যা হয় না।শিং মাছ বছরে একবার প্রজনন করে থাকেন। এ মাছ প্রথম বছরেই পরিপক্কতা অর্জন করে থাকে। শিং মাছ প্রজনন কালের সময় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ।

শিং মাছের খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা

রেণু পর্যায়ে শিং মাছ আর্টেমিয়া, জুপ্লাঙ্কটন, ক্ষুদ্র জলজ পোকা মাকড় ইত্যাদি খেয়ে থাকে। আবার বায়োপ্রাপ্ত অবস্থায় শিং মাছ জলজ পোকামাকড়, ক্ষুদ্র চিংড়ি ও মাছ, ডেট্রিটাস পচনরত প্রাণিজ দ্রব্যাদি।

শিং মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা

শিং মাছ চাষ করতে হলে পুকুরের গভীরতা হতে হবে ২ মিটার। এ মাপের গভীরতার পুকুর এ মাছ চাষের জন্য উপযোগী । পুকুরের পানি শুকিয়ে পার ভাল ভাবে ঠিক করে নিতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন, ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করে পুকুর প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করতে হয়। 

শিং মাছ চাষে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ

চালের কুঁড়া শতকরা ৪০ ভাগ? তৈল বীজের খৈল ৩০ ভাগ ও শুঁটকি ৩০ ভাগ এক সাথে মিশিয়ে গোলা আকারে বল তৈরি করে মাছকে সবররাহ করতে হবে। এছাড়া শামুক-ঝিনুকের গোশতও মাছকে খাওয়ানো যেতে পারে।

শিং মাছ চাষে সম্ভাব্য আয়

শিং মাছ চাষ করে বছরে অনেক টাকা আয় করা যা। এক চাষ মৌসুমে ব্যবস্থাপনা খরচ বাদে প্রতি মাসে ২০ শতাংশ পুকুরে ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।

মাগুর মাছ আবাসস্থল

মাগুর মাছ আবাসস্থল খাল বিল, হাওর-বাঁওড়, ডোবা নালা, পুকুর, প্লাবন ভূমি ইত্যাদি জায়গায় । এ মাছ এঁদো, কর্দমাক্ত মাটি, গাছের গুঁড়ির তলায়,ঘাসের মধ্যে ও গর্তের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতে পছন্দ করে।মাগুর মাছ স্রোতহীন আবদ্ধ পানিতে এদের সচরাচর দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়

মাগুর মাছ কচুরি পানা, পচা পাতা আগাছ বেষ্টিত জায়গায় এদের স্বচ্ছন্দে বসবাস লক্ষ্য করা যায়। খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা এদের খাদ্য গ্রহণ প্রবণতা শিং মাছের মতোই। পরিপক্কতা এ মাছ বছরে এক বার প্রজনন করে থাকে। প্রজনন কালে মে থেকে আগস্ট মাস।

মাগুর মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা

মাগুর মাছ চাষ করতে হলে পুকুরের গভীরতা হতে হবে ২ মিটার। এ মাপের গভীরতার পুকুর এ মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানি শুকিয়ে পার ভাল ভাবে ঠিক করে নিতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন, ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করে পুকুর প্রস্তুতি পর্ব সম্পন্ন করতে হয়। ৪-৬ সে.মি দৈর্ঘ্যের সুস্থ-সবল পোনা পুকুরে মজুদ করা উত্তম। শতাংশপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। শিং মাছের মতো মাগুর মাছকেও মাছের মোট ওজনের ৪-৫% হারে দৈনিক দুইবার খাবার সরবরাহ করতে হবে।

মাগুর মাছের খাবার

মাছের খাবার হিসেবে শিং মাছের অনুরূপ মাগুর মাছ রেণুপর্যায়ে আর্টেমিয়া, জু-প্লাঙ্কটন, ক্ষুদ্রজলজ পোকা মাকড় ইত্যাদি খেয়ে থাকে। আবার বায়ো প্রাপ্ত অবস্থায় মাগুর মাছ জলজ পোকা মাকড়, ক্ষুদ্র চিংড়ি ও মাছ, ডেট্রিটাস পচনরত প্রাণিজ দ্রব্যাদি।দৈনিক দু'বার যথারীতি নিয়মে খাদ্য প্রদান করতে হবে। যথারীতি নিয়মে মাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হলে ৮-১০ মাসেই মাগুর মাছ বাজার জাত করার উপযোগী সাইজে উন্নীত হয়ে থাকে।

মাগুর মাছ চাষ সম্ভাব্য আয়

মাগুর মাছ চাষ করে বছরে অনেক টাকা আয় করা যা। এক চাষ মৌসুমে ব্যবস্থাপনা খরচ বাদে প্রতি মাসে ২০ শতাংশ পুকুরে ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।

শিং ও মাগুর মাছ চাষের সুবিধা সমূহ

আমাদের দেশের বাজার গুলোতে শিং ও মাগুর মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এর ফলে শিং ও মাগুর মাছের চাষ করে খুব সহজেই লাভবান হওয়া যায়। শিং ও মাগুর মাছের চাষ অন্যান্য মাছ চাষের তুলনায় অনেক সহজ। যে কেউ চাইলেই বাড়ির আশপাশের পুকুর কিংবা ছোট জলাশয়ে শিং ও মাগুরের চাষ করতে পারেন। 

শিং ও মাগুর মাছ খুব কম পানিতে তুলনা মূলক ভাবে অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়।এই সব মাছ চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধাই হল খুব কম পরিমান জায়গায় চাষ করে বেশি পরিমান অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই যাদের জায়গা কম রয়েছে তারাও চাইলে এসব মাছের চাষ করে লাভবান হতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

শিং ও মাগুরমাছ চাষের আরেক টি বড় সুবিধা হল এসব মাছ প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থেকে জীবন ধারণ করতে পারে।এদের কনো রকম ক্ষতি হয় না । যদি পুকুরে পানির তাপমাত্রা বেশি থাকে কিংবা অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয় তাহলে সেই পুকুরে ও শিং ও মাগুর মাছের চাষ করা যায়। শিং ও মাগুর মাছের চাষ করলে মাছের খাদ্য নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা অনেক সুবিধাজনক ।

শিং ও মাগুরমাছ এর চাষ করলে মাছের খাদ্য নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না । এরা বাড়ির ফেলে দেওয়া খাদ্য থেকে প্রায় সকল ধরণের খাদ্যই গ্রহণ করে থাকে। খাদ্য কেনার জন্য আলাদা ভাবে তেমন কোন খরচ করতে হয় না।এরা পুকুুরে ঘাস শেয়লাা জাতীয় খাবার বেশি খায় । শিং ও মাগুর মাছের রোগ বালাই অনেক কম হয়ে থাকে। তাই এসব মাছের চাষ করলে মাছের রোগ কিংবা চিকিৎসা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। চিকিৎসার জন্য আলাদা কোন খরচও করতে হয় না।

মাগুর ও শিং মাছের পোনা পরিবহণ পদ্ধতি

মাছ চাষের ক্ষেত্রে সবচে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভালো মানের পোনা সংগ্রহ করা। আর সেই পোনা সংগ্রহ করার সাথে সাথে যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে তা হচ্ছে পরিবহণ। কারণ সঠিকভাবে পরিবহণ না করলে পোনা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা যেমন রয়েছে তেমনি মারাও যায় অনেক পোনা। যে কোনো উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ ও পরি বহনের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে ঝুঁকি কম থাকে। 

সাধারণত শিং ও মাগুর মাছের পোনা পরিবহণ একটু ব্যতিক্রম। কারণ এ মাছ গুলো কাঁটা যুক্ত হওয়ায় বড় আকারের পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। বড় পোনাঅক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণ না করাই ভালো। শিং ও মাগুরের ছোট পোনা অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহণ করাই ভালো। এ পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে পানি এবং অক্সিজেনসহ পোনাকে প্যাকেট করে পরিবহণ করা হয়। 

শিং ও মাগুর মাছ চাষ-শেষ কথা

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল শিং ও মাগুর মাছ সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি শিং ও মাগুর মাছ চাষ এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url