গর্ভাবস্থায় কি ভাবে নারীর দাঁতের যত্ন নিবেন পড়ুন

গর্ভাবস্থায় অনেকেই জানতে চান কি ভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া যায়।কিন্তু সঠিক ভাবে কথাও জানতে পারেন না। গর্ভাবস্থায় কি ভাবে নারীর দাঁতের যত্ন নিবেন সঠিক ভাবে জানতে আমাদের পোস্টটি সম্পূন পড়ুন।কারন এ পোস্টে বিস্তারিত ভাবে  গর্ভাবস্থায় কি ভাবে নারীর দাঁতের যত্ন নিবেন উল্লেখ করা হয়েছে।

গর্ভাবস্থায় কি ভাবে নারীর দাঁতের যত্ন নিবেন পড়ুন

বাংলাদেশের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশেই গর্ভবতী মা তাদের মুখগহ্বরের তেমন যত্ন নেন না। আবার অনেকেই জানেন না কি ভাবে যত্ন নিতে হয় ।তাই তাদের মধ্যে অনেক বেশি দাঁতের সমস্যার দেখা দিয়ে থাকে।যদি ঠিক মতো চিকিৎসা না নিলে পরবর্তীতে তারা নানান রকমের দাতেঁর সমস্যায় ভোগেন।আমাদের উচিত নিয়মিত দাঁতের যত্ন নেওয়া ।তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা দাঁতের যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।

মুখ ও দাঁতের যত্ন নেবেন কিভাবেঃ

আমাদের মতে দাঁত কে সুস্থ সবল দেহের জন্য দাঁত ও মাড়ির যত্ন করা একান্ত প্রয়োজন।কেননা দাঁত ও মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যকে অবহেলা করে নিরোগ জীবন আশা করা যায় না। মুখ ও দাঁতের যত্নে করণীয় উপদেশ, সবার জন্য সাধারণ উপদেশ। প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমাবার আগে টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে ওপরের দাঁত ওপর থেকে নিচে এবং নিচের দাঁত নিচ থেকে ওপরের দিকে এবং দাঁতের ভেতর দিকেও মাজবেন।

আমরা যখন জানতে পারি যে ফ্লুরাইড দেয় যে কোনো টুথপেস্ট দাঁতের জন্য উপকারী। দু-তিন মাস অ-র টুথপেস্ট ও ব্রান্ড বদলাবেন, কারণ বিভিন্ন পেস্টে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। যেসব জায়গা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা সম্ভব নয় সেসব জায়গায় ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করবেন। কয়লা, গুল, টুথ পাউডার, ছাই, মাটি, গাছের ডাল ইত্যাদি ব্যবহার নিষেধ। অত্যধিক পান-সুপারি খাবেন না-এতে দাঁত ক্ষয় হয়ে যায়। বিড়ি-সিগারেট জাতীয় কোন কিছু খাবেন না- এতে মুখ ও দাঁতের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই ভালো ভাবে দাঁত পরিস্কার করা উচিৎ।

গর্ভাবস্থায় দাঁতের রোগ কীভাবে সৃষ্টি হয়ঃ

আমরা যখন আরো জানতে পারি যে গর্ভাবস্থায় একজন মাকে সন্তান প্রসবের জন্য তিনটি ত্রৈমাসিক অতিক্রম করতে হয়ে থাকে।তাই এ চক্রে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।আর মাড়িতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে জিঞ্জিভাইটিসে পরিবর্তিত হয়ে থাকে  । এছাড়া রোগীর যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে দাঁত ঢিলে হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণে রোগী দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করার পরেও মাড়ি থেকে রক্তপাত অনুভব করেন। 

শক্ত খাবার খাওয়ার সময় মাড়িতে অশুষ্টি হতে পারে। এসব সমস্যা দেখা দেওয়ার পরেও যদি রোগী ডেন্টাল সার্জনের কাছে না যান তবে এই সমস্যা পেরিওডন্টাল রোগে পরিণত হতে পারে। আর এই সমস্যা ডেন্টাল ইনফেকশন সৃষ্টি করে এবং দাঁত শিথিল করে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে যা সংক্রমণ সুস্থ করতে বিলম্ব করে। গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। 

যে কোন বিশেষ করে মিষ্টি খাবারের খাদ্যাভাস থাকলে সঠিকভাবে দাতেঁর যত্ন না নিলে প্রচুর ক্যাভিটির সৃষ্টি হয়। উপরন্তু এটি প্রেগন্যান্সি গ্রানুলোমা, জিনজিভাইটিস, প্রেগন্যান্সি এপুলিস, দুর্বল দাঁত, মুখের শুষ্কতা ও দাঁতের ক্ষয়ের মতন সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। এই সমস্যাগুলো সাংঘাতিক সমস্যা, যেমন অকালপ্রসব, বাচ্চার কম ওজন ও প্রি-ইকলম্পসিয়াতে পরিণত হতে পারে। 

যেভাবে এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হবেঃ

যে কোন গর্ভবতী রোগী যে কোনো সময় সুপারফিসিয়াল ক্লিনিং এবং কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডেন্টালসার্জনের কাছে যেতে পারবেন। তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ের পর দাঁতের রোগের চিকিৎসা করানো উচিত না। গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের অর্থাৎ ১৪ সপ্তাহ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে দাঁতের রোগের চিকিৎসা নেওয়া উচিত। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

আমরা যখন জানতে পারি যে গাইনোকোলজিস্টকে অবশ্যই গর্ভবতী মায়েদের দাঁতের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে । যাতে করে বিশেষজ্ঞ দাঁতের জরুরি চিকিৎসা অনুমোদন করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে দাঁতের যে ধরনের চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে । দাঁত পরিষ্কার করানো । লোকাল অ্যানেস্থেসিয়ার মাধ্যমে দাঁত সরিয়ে নেওয়া । রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট (গাইনোকোলজিস্তের থেকে মায়ের অবস্থা জানার পর) ক্যাভিটি ফিলিং করানো । গর্ভাবস্থায় মৌখিক পরিছন্নতা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টি ।

গর্ভবতী মা ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপঃ

প্রতিদিন দুইবার নরম ব্রিসল টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার করা। রাতের খাবারের পরে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগে এবং সকালের নাস্তা করার ঠিক ১৫ মিনিট পরে। আমরা সবাই ক্লোরোহেক্সিডিন মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গন্ধ যদি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সহনীয় হয়। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল মাউথওয়াশ লালা থেকে ব্যাকটেরিয়া অপসারণ করে দাঁতের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। আমরা সবাই ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার।

আমরা যখন জানতে পারি এটি দাঁতের মধ্যে খাবারের আটকে থাকা কনা পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে যদি দাঁতের ফাঁক থাকে। এফডিএ এক্ষেত্রে এই ব্রাশ প্রযোজ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। রঙিন মিষ্টি খাবার খাওয়ার পর দাগ পড়লে স্টেইন রিমুভার ব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দাঁতের ক্ষয় দূর করতে সহায়তা করে। আমরা যখন নোনাজল মুখের ভেতরে পিএইচ ভারসাম্য বৃদ্ধি করে কাজ করে। আরো অনেক বেশি ক্ষারীয় মৌখিক পরিবেশ তৈরী করে।

আমরা যখন নোনাজল পানি দাঁতের মধ্যে দিয়ে থাকি এর ফলে ব্যাকটেরিয়া বিকাশ করতে সক্ষম হয় না। তাই গর্ভবতী মায়ের কুসুম গরম পানিতে লবণ পরিমাণ মতো মিশিয়ে কুলকুচি করা উচিত। যখন আমরা সবাই ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার এবং শাকসবজি মাড়ির ফোলা ভাব প্রতিরোধ করতে পারে এবং রক্তপাত বন্ধ করতে পারে। ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার দাঁতের হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।পানি পান করা দাঁতে প্লাক তৈরি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এবং মুখের লালা থেকে ব্যাক্টেরিয়া সরাতে সহায়তা করে। 

দাঁতের চিকিৎসার সময় গর্ভবতী রোগীর অঙ্গস্থিতি বজায় রাখাঃ

ডেন্টাল ইউনিটে গর্ভবতী মায়েদের জন্য কাৎ করে আধা-সোজা অঙ্গস্থিতিতে বসানোর পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে। গর্ভবতী মায়েরা সবসময় ডেন্টাল সার্জনের কাছে যেতে ভয় পান। তবে ভাল ব্যাবহারের সঙ্গে সঠিক কাউন্সেলিং এবং ডেন্টাল ইউনিটে কাৎ ও আধা-সোজা অঙ্গস্থিতি রোগীকে উপশম করবে। রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করবে। এর ফলে রোগীর দাঁতের চিকিৎসা নিখুঁতভাবে করা যাবে।

দাঁতের যত্ন ও দাঁতের স্বাস্থ্যঃ

প্রতিদিন দু’বার করে দাঁত মাজা উচিত। রাতে খাবার পরে বা শোবার আগে একবার আর সকালে প্রাতঃরাশ খাবার পর আর একবার এই দু’বার দাঁত ব্রাশ করার সময় হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাঢ়ি ম্যাসাজ করতে ভুলবেন না। মাঢ়ি ম্যাসাজ করলে আঙ্গুলের চাপে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করেন। এটা একেবারেই করবেন না। রাতে শোবার আগে যখন দাঁত মাজেন তখনই মুখ পরিষ্কার হয়ে যায়। 

তাই সকালে উঠে দাঁত মাজা অযৌক্তিক কথা নয়। আসলে দাঁত ব্রাশ করার কারণ হলো দাঁতের মাঝে জমে থাকা খাবার খুটে বের করা। খাবার দাঁতের মাঝে জমে থাকলে, তা পচে এসিড হয়ে যায়। আর এই এসিড প্রকোপে দাঁত ক্ষয়ে গর্ত হয়ে যায়। একেই চলতি কথায় বলে দাঁতে পোকা লেগেছে। আসলে ওটা পোকা নয়। দাঁতের ঐ অংশে গর্ত হলে অংশটা কালো লাগে। এমন অবস্থা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারি পরামর্শ নেবেন। দাঁতে গর্ত হলে সেটা একেবারে মাঢ়ির মধ্যে নার্ভ পর্যন্ত চলে যেতে থাকে। 

দাঁতে ব্যথা শুরু হয় তখনই। আর তখনই দাঁত তুলে ফেলে দিতে হয় কিন্তু অতোটা হবার আগেই সিল করে ফেলা উচিত।অনেকের ধারণা, দাঁতে পোকা লাগলে, তার পাশের দাঁতটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধারণা ভুল। বরং যে দাঁতের ক্যাভিটি বা পোকা হয় সেই দাঁতের ঠিক বিপরীত দিকের দাঁতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

দাঁত পরিষ্কার করণঃ

দাঁত মাজার জন্য বর্তমান সময়ে টুথ পেস্ট ব্যবহার করার তেমন কোনোও প্রয়োজন নেই।কারন প্রায় সবাই বাজারে চলতি বিভিন্ন পেস্ট ব্যবহার করেন। আসলে পিপারমেন্ট এর ঝাঁঝালো গন্ধটা ভালো লাগে বলেই লোকে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজে। কেবল ব্রাশ দিয়ে ঘষলেও যা ফল হয় পেস্ট দিয়ে মাজলেও একই ফল হয়। কিন্তু শুধু ব্রাশে ব্যথা লাগতে পারে। তাছাড়া পেস্ট দিলে মুখে একটা তরতাজা ভাব আসে। দাঁত ঘষার কায়দাটাই হলো আসল। 

আরো পড়ুুনঃ কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন বিস্তারিত জানুন

ভালো মিডিয়াম ব্রাশ দিয়ে উপর নিচ করে দাঁত মাজবেন।এতে দাঁতের উপরাংশটাও নিয়মিত ভালো ভাবে মাজবেন যাতে খাবারের কণা বেরিয়ে আসতে পারে।আর খেয়াল রাখবেন ব্রাশ এর দাঁড়াগুলো যেনো মাঢ়িতে আঘাত না করে। কারণ মাঢ়িতে আঘাত লাগলে, মাঢ়ি দাঁতের গোড়া থেকে নেমে বা উঠে যায়, তাতে দাঁতের দৃঢ়ভাব নষ্ট হয়। তাছাড়া মাঢ়ি ও দাঁতের লাগোয়া অংশটায় যে এনামেল থাকে তাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শেষ কথাঃ

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল  গর্ভাবস্থায় নারী দাঁতের যত্ন কারন সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি কিভাবে নারী দাঁতের যত্ন নেওয়া যায় এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।  


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url