আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আপনি হয়তো আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন। আমলকির প্রাকৃতিক গুনাগুণ অনেক । কিন্তু আমরা অনেকেই আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে জানি না । তবে সমস্যা নেই আজকে আমি আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
যেহেতু আপনি আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে জানেন না সে ক্ষেত্রে আমলকীর কি এবং আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে আমাদের ভালো জ্ঞান রাখা জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করি।
আমলকী কী
আমলকী হলো এক ধরনের ভেষজ ফল।আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।যা অনেক ধরনের অসুখ সারানো ছাড়াও রোগ প্রতি-রোধক হিসাবে আমলকী সাহায্য করে থাকে বা ব্যাবহার করা হয় । আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধে ও বর্তমানে আমলকীর নির্যাস ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে ঔষধি গুনাগুন অনেক বেশি।
কাঁচা আমলকী
আমলকি নিয়ে প্রাথমিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমলকি বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে।
প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগেও আমলকি কার্যকর বলে ইঁদুরের উপর চালিত গবেষণায় প্রমান মিলেছে। প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের পরে ক্ষতিগ্রস্ত প্যানক্রিয়াস (অগ্ন্যাশয়) -এর ক্ষত সারাতে আমলকি কার্যকর। আমলকির ফল, পাতা ও ছাল থেকে তৈরি পরীক্ষামূলক ওষুধে কিছু রোগ নিরাময়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে যেমন- ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, প্রদাহ এবং কিডনি-রোগ।
আমলকি মানুষের রক্তের কোলেস্টেরল -মাত্রা হ্রাস করতে পারে বলে প্রমাণ রয়েছে ডায়াবেটিক ইঁদুরের উপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির রস রক্তের চিনির মাত্রা কমাতে পারে এবং লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরোদ্ধারে সাহায্য করতে পারে। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন-সি বা এস্করবিক এসিড থাকে (৪৪৫ মিগ্রা/১০০ গ্রাম)।
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়ার অপকারিতা
এ ছাড়া আরো অন্যান্য উপাদান নিয়ে মত ভেদ আছে এবং আমলকির এন্টিঅক্সিডেন্ট’রূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা ভিটামিন-সি এর নয়, বরং ‘এলাজিটানিন’ নামক পদার্থ সমূহের বলে মনে করা হয়।যেমন এমব্লিকানিন-এ (৩৭%), এমব্লিকানিন-বি ৩৩%), পানিগ্লুকোনিন (১২%) এবং পেডাংকুলাগিন (১৪%).এতে আরো আছে পানিক্যাফোলিন, ফিলানেমব্লিনিন-এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ।এই ফলে অন্যান্য ‘পলিফেনল’ও থাকে। যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, কেমফেরল, এলাজিক এসিড ও গ্যালিক এসিড।
শুকনা আমলকী
গরমে শুকনো আমলকি খেলেও মেলে দারুন উপকার, মুক্তি পাবেন এই সমস্যা গুলি থেকে ঠাণ্ডাসর্দি, ভাইরাস ইনফেকশন, অ্যাসিডিটি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের সমস্যা যেমন অনেক ধরনের সমস্যা এটি সেবনে দূর করা যায়। আসুন জেনে নেই এর উপকারিতা। শুকনো আমলকি স্বাদে ও স্বাস্থ্যে ভরপুর।
ভিটামিন সি ছাড়াও এটি অন্যান্য অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। ঠাণ্ডা-সর্দি, ভাইরাল ইনফেকশন, অ্যাসিডিটি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বকের সমস্যা যেমন অনেক ধরনের সমস্যা এটি সেবনে দূর করা যায়। আসুন জেনে নেই এর উপকারিতা। আমলকীতে এমন অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ যেসব খাবার শীতে অবশ্যই খাবেন
এটি ঠান্ডা-সর্দি এবং কাশি-সহ অনেক ধরণের ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে। সাধারণত চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে আমলকী ব্যবহার করা হলেও এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমলকী রোদে শুকিয়ে নিয়ে খেলে তা অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শুকনো আমলকী খাওয়ার উপকারিতা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে শুকনো আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়। হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকে । দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাবে ।
আমলকীর ব্যবহার
আমলকির অনেক উপকারিতা আছে। ফল ও পাতা ওষুধ রূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে অনেক পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে।আমলকিতে পেয়ারা লেবুর চেয়ে ৩ গুণ বেশি আমলকী ভিটামিন সি আছে।বিশেষ করে আমলকিতে কমলা লেবুর চাইতে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি আমের চেয়ে ২৪ গুণ।
কলার থেকে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলি গ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে।স্কার্ভি বা দন্ত রোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ কিডনির রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপায় ও ভেষজ উদ্ভিদের কার্যকারিতা
লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে এক সাথে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি শুকনো ফল এক সাথে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।
বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহার হয়।কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়া-তাড়ি ঘুম আসে।কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
আমলকিতে আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল। যা আপনার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। যা আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা কোলাজেন প্রোটিন উৎপাদন বাড়ায়। আপনার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুল তাড়াতাড়ি লম্বা করে এবং চুল আরও ঘন করে তোলে।
আমলকীর ঔষধি গুণ
- আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।
- বমি বন্থে কাজ করে।
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
- এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।
আমলকি কিডনির জন্য ক্ষতিকর
কিডনির উপর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া: কিডনির সমস্যা থাকলে আমলকীর রস পান অনেক সময় তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এই রস মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ, তবে এতে কিছু বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে যা কিডনি রোগের কিছু কোষ এবং টিস্যুর ক্ষতি করতে পারে। এ কারণে কারও কিডনি জটিলতা থাকলে এই রস পান এড়িয়ে চলুন।
আমলকীর উপকারিতা
- আমলকী ত্বক, চুল ও চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী।
- আমলকী হজমে সাহায্য করে থাকে।
- আমলকী লিভার ভাল রাখে।
- ব্রেনের কার্যকলাপে সাহায্য করে ফলে মেন্টাল ফাংশনিং ভাল হয়।
- আমলকী সুগার নিয়ন্ত্রণ করে ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- হার্ট সুস্থ রাখে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে তোলে।
- শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে, মাসল টোন মজবুত করে।
- জ্বর, বদহজম, সানস্ট্রোক থেকে রখা করে।
- ব্রণ ও ত্বকের অন্যান্য সমস্যার জন্য উপকারী।
- পেটের জ্বালা জ্বালাভাব কম রাখে। লিভারের কার্যকলাপে সাহায্য করে, পাইলস সমস্যা কমায়।
- শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। ব্রঙ্কাইটেসও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
- আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে থেকে পারেন। খিতে বাড়াতে সাহায্য করে।
- দুধ বা পানির সাথে আমলকীগুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।এতে পেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
- খাবারের সাথে আমলকীর আচার খেতে পারেন এতে হজমে সাহায্য করবে।
আমলকীর অপকারিতা
- আমলকি খাওয়া উপকারীতা থাকলে ও আমরা জানি না আমলকির ও অনেক অপকারিতা রয়েছে।
- লিভারের ক্ষতি ও খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- অ্যাসিডিটি বাড়ায় ।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে ।
- রক্তচাপকে প্রভাবিত করে ।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ।
আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন-শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল আমলকীর প্রাকৃতিক গুনাগুন সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে।এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url