কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন বিস্তারিত জানুন

আপনি হয়তোকিডনিতে পাথর হওয়ার কারন সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন।কিন্তু আপনারা অনেকেই কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন সম্পর্কে জানেন না ।তবে সমস্যা নেই আজকে আমি কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন সম্পর্কে আপনাকে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন বিস্তারিত জানুন

কিডনি আমদের শরীরে অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । কিডনি ছাড়া মানুষ জীবিতো থাকে না । কিডনি ভালো রাখতে আমাদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হয় । তাহলে কিডনি ভালো থাকে । কিডনি  হল  এক প্র্রকার ছাকনী যা আমাদের দেহের তরল সব পদাথ পরিষ্কার করে । আমাদের প্রস্রাবে পানি, লবন ও খনিজ পদার্থের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। 

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন

  • প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমান পানি পান করা।
  • বেশি মাত্রায় আমিষ ও প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
  • অতিরিক্ত খাবার লবন (সোডিয়াম সল্ট/টেবিল সল্ট) গ্রহণ।
  • বেশি মাত্রার অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ যেমন চকলেট।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা।
  • অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করা।
  • কিছু কিছু রোগ যেমন গ্যাষ্ট্রিক, বাইপাস সার্জারী, ইনফ্লামেটরি বাউল ডিজিস, ক্রণিক ডায়রিয়া, হাইপার প্যারাথাইরয়েড, মূত্রনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি কিডনি পাথর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কিডনির পাথর সম্পর্কে সজাগ থাকুন, আপনার নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এই অযাচিত সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারে।

কিডনিতে পাথর নির্ণয়

প্রথমত,

রোগের ইতিহাস জানতে হবে। আগে কখনো কিডনি বা মূত্রতন্ত্রে পাথর ধরা পড়েছিল কি না, বর্তমানে ব্যথা থাকলে, এর প্রকৃতি ইত্যাদি জানতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অক্সালেট ও সিসটিনের পরিমাণও দেখা হয়। পাথর দ্বারা কিডনির কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না তা জানার জন্য রক্তের ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন করার প্রয়োজন হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় কি মিলন করা যায়

শতকরা ৪ থেকে ৫ ভাগ ক্ষেত্রে প্যারা থাইরয়েড গ্রন্থি ও ভিটামিন ডি-এর আধিক্যে সারকয়ে ডসিস নামক রোগ অথবা অস্থির অসুখের কারণে পাথর হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওই রোগের ভিত্তির ওপর নির্ভর করে করতে হয়।

দ্বিতীয়ত,

কিছু পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে এক্স-রে ও আলট্রাসাউন্ড। অনেক ক্ষেত্রে কিডনির পাথর নীরব থাকে। উপসর্গবিহীন অবস্থায় পাথর নির্ণয় করতে হলে আলট্রাসনোগ্রাম অত্যন্ত জরুরি।

তৃতীয়ত,

প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে কিডনির কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা দরকার। প্রয়োজনবোধে সঠিক চিকিৎসার জন্য পাথর কোথায় অবস্থান করছে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য আইভিইউ এক্স-রে বা হেলিকেল সিটিস্ক্যান করা যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ মিষ্টি আলু যেভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কিডনিতে পাথর হলে যে খাবার পরিহার করা উচিত 

বেশী অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন-

  • পালংশাক, বীট, মিষ্টি আলু, চা, চকোলেট এবং সয়াজাতীয় খাদ্য পরিহার করুন। 
  • খাবারে লবণ কম ব্যবহার করা এবং পরিমাণে অল্প প্রাণীজ আমিষ গ্রহণ করা।
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া তবে ক্যালসিয়াম সম্পুরকের ক্ষেত্রে সতর্কতা মেনে চলা।

ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার খেলে ক্যালসিয়াম পাথর বেশি হয়।কাজেই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার, যেমন- দুধ ও দুগ্ধ জাত খাবার খাওয়া যাবে। তবে যাদের একটি কিডনিতে একবার পাথর হয়েছে, তাদের অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ও ভিটামিন ডি খাওয়া একেবারেই অনুচিত।

যাদের কিডনিতে একবার পাথর ধরা পড়েছে, তাদের ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মাংস, মাছ ও পোলট্রি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। খবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। যাদের হাইপার প্যারাথাইরয়েড রোগ রয়েছে, তাদের অতি শিগগির তা অস্ত্রো পচার করা উচিত। বংশে কিডনিতে পাথর রোগের ইতিহাস অথবা কারও একাধিক পাথর থাকলে তাদের আবার পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

কিডনির নালীতে পাথর হলে যে সমেস্যা হয়

কিডনি মানুষের শরীরের পিছন দিকে মেরুদন্ডের কাছে সীমের বিচির আকৃতির দু'টি অঙ্গ। কিডনির সাথে মূত্রথলির সংযোগকারী নালী রয়েছে যাকে ইউরেটার বা কিডনিনালী বলে। এই কিডনিনালী ২৫ সেঃ মিঃ-এর মত লম্বা। এর তিনটি জায়গায় একটু চাপা রয়েছে। প্রথমটি হল কিডনির পেলভিসের সাথে ইউরেটারের সংযোগ স্থল, দ্বিতীয়টি যখন পেলভিক ব্রীজ ক্রস করে এবং তৃতীয়টি যখন মূত্রনালী প্রস্রাবের থলিতে প্রবেশ করে।

কিডনির পাথর নালীতে নেমে আসে তখন এই জায়গা গুলোতে পাথর আট কানোর সম্ভবনা থেকে থাকে। এখানে উল্লেক্ষ্য যে, মূত্র নালীর পাথর মূত্র নালী তে উৎপন্ন হয় না এটি কিডনিতে উৎপন্ন হয়ে কিডনি নালীর দিকে নেমে আসে। কিডনি নালীতে নেমে আসার সময় এটি কিডনি নালী কে সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে বন্ধ করে দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

ফলে কিডনির মধ্যে প্রস্রাব জমে কিডনি আকারে বড় হয়ে থাকে যাকে বলা হয় হাইড্রোনে ফ্রোসিস।অনেক দিন ঠেকে এই রকম থাকলে কিডনি ধীরেধীরে নষ্ট হতে পারে। কিডনির পাথর ইউরেটারে নেমে আসলে দেহের পিছনে বক্ষ খাঁচার নীচে তীব্র ব্যথা অনু ভূত হতে পারে। এই ব্যথা ক্রমশ নীচের দিকে যেমন তল পেট বা উরুর দিকে অনু ভূত হতে পারে।

ব্যথা ক্রমশ তীব্র হতে থাকে এবং আবার কমে আসে, এই ভাবে পুনঃ পৌণিক ভাবে ব্যথা চলতে থাকে। প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাব রক্তবর্ণ, ঘোলা ওদুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। কখনও কখনও কিছুক্ষণ পর পর প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। যদি সংক্রমণ থাকে তবে বমি বমি ভাব, কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর আসতে পারে। ইউরেটারে পাথরের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যথার তীব্রতা ও অবস্থান পরিবর্তন হয়।কিডনি পাথরের ঝুকির মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ইতিহাস।

পরিবারের এক জনের পাথুরে রোগ হলে অন্য দের হবার সম্ভাবনা বেশী। বয়স্ক অর্থাত্ যাদের বয়স ৪০ বত্সরের বেশী তাদের মধ্যে এই রোগ বেশী দেখা যায়। তবে অল্প বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যায়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা এই রোগে আক্রান্ত বেশী হয়ে থাকেন।

প্রাথমিক চিকিৎসা

সাধারণত ৫ মিঃমিঃ আয়তনের পাথর পানি বেশী খেলে নিজে নিজে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারে।৭ মিঃমিঃ আয়তন পর্যন্ত পাথরের ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা দিতে হয়।যেমন-বেশি পরিমাণে পানি পান করা দরকার, প্রতি এক ঘণ্টা পরপর এক গ্লাস পানি পান করা যেতে পারে,জগিং করা ও নিয়মিত ব্যয়ম করতে হবে। 

 শল্য চিকিৎসা

যদি পাথরের আকার অনেক বড় হয় যে নিজে থেকে বের হওয়ার কোনো সম্ভাব না নেই তাহলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

প্রধানত চার ধরনের শল্যচিকিৎসা রয়েছে। এগুলো হলো,এক্সট্রা করপোরিয়াল শকওয়েভ লিথোট্রিপসি (ইএসডব্লিউএল),পিসিএনএল,ইউরেটেরোস্কোপিক পদ্ধতি ওল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি।

আরো পড়ুনঃ রুট ক্যানেল করতে কত সময় লাগে

ইএসডব্লিউএল,

এ ব্যবস্থায় শক্তি শালী তরঙ্গ পাথরে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে দেয়। পরে টুকরো পাথর প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই পদ্ধতির সব থেকে বড় সুবিধা হলো মাত্র ২০-৩০ মিনিট সময় লাগে। রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না। চিকিৎসার দু-তিন ঘণ্টা পর রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পিসিএনএল,

যদি পাথরের আকার বড় হয়, তখন ভাইব্রেশন দিয়ে কিডনির পাথর গুঁড়ো করা হয়, যা প্রস্রাবের সঙ্গে নেফ্রোসটমি টিউব দিয়ে বেরিয়ে আসে। পরে প্রয়োজনবোধে ইএসডব্লিউএল করা হয়।

ইউরেটেরোস্কোপিক,

এই ব্যবস্থায় ছোট্ট ফাইবার স্কোপ মূত্রপথ, প্রস্রাবের থলি হয়ে কিডনি নালি থেকে পাথর গুঁড়ো করে অথবা বাক্সেট দিয়ে ধরে পাথর বের করে নিয়ে আসা হয়।

ল্যাপারোস্কোপিক,

এখন এই পদ্ধতি তে বিভিন্ন অস্ত্রো পচার করা হচ্ছে। ছোট ছোট দু-তিনটি ছিদ্র করে ক্যামেরার মাধ্যমে সহজেই পাথর বের করা যায়। এই ব্যবস্থায় জটিল তাও কম।

এই পাথুরে রোগ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অর্থাৎ ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা উচিত। 

যেসব খাদ্যে অক্সালেট বেশী আছে যেমন বীট, মিষ্টি আলু, বাদাম, চা, চকলেট ইত্যাদি কম খাওয়া প্রয়োজন।কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাব না আছে এমন কোন রোগ শরীরে থাকে তার যথা যথ চিকিৎসা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যার একবার কিডনি পাথর রোগ হয় তার বার বারই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভব না থাকে।

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন-শেষ কথা

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি কিডনিতে পাথর হওয়ার কারন ও প্রাথমিক চিকিৎসা এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।

আজকের আর্টিকেল টি পড়ে আপনার কোনকোন বিষয় গুলিভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্ব পূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url