পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়
আপনি কি পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় জানতে গুগলে সার্চ করছেন।তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।কেননা এ পোস্টের মধ্যে পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় তার বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় জানতে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মাছ আমাদের প্রধান খাদ্য আমাদের মাছ ভাতে বাঙালি বলা হয়। ছোট বড় সবাই মাছ খেতে ভালবাসি। গ্রাম নদী নালা সব জায়গায় মাছ হয়। আমরা আমাদের গ্রামের পুকুর খাল বিল এ এর মাছ চাষ করি।পুকুরে মাছ চাষ করলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। এর জন্য আমরা এক জায়গায় অনেক রকম মাছ চাষ করতে পারি। নিচে কিছু মাছ চাষের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
পুকুরে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া উপায়
বর্তমান সময়ে পুকুরে মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করে অনেক ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে।আমাদের দেশে বহু মাছ ব্যবসায়ী আছে যারা প্রথমবারের মতো মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছে।আপনি যদি মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে মিশ্র প্রজাতির মাছ কিভাবে চাষ করতে হয় অর্থাৎ মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
আরো পড়ুনঃ শিং ও মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়
বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করে কোটিপতি হচ্ছে।কেননা এখনকার বাজারে মিশ্র প্রজাতির মাছের অনেক চাহিদা। এর জন্য দিন দিন পুকুরে মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষের চাহিদা বারছে। মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করে দেশে ও বিদেশে বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব। প্রতিবছর এমন ও ব্যবসায়ী আছে যারা শুধু মিশ্র প্রজাতির মাছ বিক্রি করে ইনকাম করেন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি।
মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করা অনেক সহজ।কেননা অল্প পরিমান জমিতে অনেক মাছ চাষ করা যায় ।আর এখান থেকে ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে হলে সঠিক ভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে মিশ্র প্রজাতির মাছ চাষ করতে হবে।তাহলে আপনি শুধু মিশ্র প্রজাতির মাছ বিক্রি করে মাসে অনেক অর্ধ উপার্জন করতে পারবেন।
মাছ চাষ ও পরিকল্পনা করা
মাছ চাষে লাভবান হতে হলে মাছ চাষ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত প্রতিটি পূর্বে চাষিকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। মাছ চাষির অজ্ঞতা বা অবহেলায় অনেক সময়েই তারা ভুল করে থাকেন এবং পরবর্তীতে ভুলের মাশুল দিতে হয়।মাছ চাষি তাদের এসব ভুল বা অনিয়মগুলো তাদের সুবিধার জন্য আলোচনা করা হচ্ছে।
রুই জাতীয় মাছের সাথে মলা-পুঁটির মিশ্র চাষ পুকুর মৌসুমী জলাশয় নির্বাচন দো-আঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটির পুকুর ভালো। পুকুর/জলাশয় বন্যামুক্ত এবং মাঝারী আকারের হলে ভালো হয়। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে এমন পুকুর নির্বাচন করা উচিত। পানির গভরীতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।
পুকুর প্রস্তুতি করা
পুকুর পাড় ঠিক ঠাক ভাবে বাধাই ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। রাক্ষুসে মাছ ও ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর শতাংশ প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
মাছের নানা রোগব্যাধি প্রতিরোধে আমাদের করণীয়
প্রাণি মাত্রই কোনো না কোন এক সময় রোগে আক্রান্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। মাছের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় না। নানা কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ের চেয়ে বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছে রোগব্যাধি বেশি হয়ে থাকে। তাই পুকুর-দীঘির মাছকে প্রায়ই নানান রোগের কবলে পড়তে দেখা যায়। পুকুর-দীঘিতে সচরাচর যেসব রোগে মাছ আক্রান্ত হতে পারে, এ ধরনের কয়েকটি সম্ভাব্য রোগব্যাধি প্রতিরোধে ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করা হলো।
মাছের ক্ষত রোগ পরিক্ষা করা: মাছের ক্ষত রোগ সাধারণত শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, বাইন, কৈ, মেনি, ব্রিগেল, কার্পিও এবং পুকুরতলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
ক্ষত রোগ হলে করণীয় কি: মূলত শীত মৌসুমে ক্ষত রোগের কবল থেকে মাছ মুক্ত থাকে।ক্ষত রোগে আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে তারাতারি তুলে ফেলতে হবে।ক্ষত রোগে আক্রমণের পূর্বে প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শেষে অথবা কার্তিক মাসের প্রথম দিকে পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ভিজিয়ে রেখে ও ১ কেজি হারে লবণ প্রয়োগ করতে হবে।
মাছের পেট ফোলা রোগ নিণয়: মাছের পেট ফোলা রোগে রুই জাতীয় মাছ, শিং-মাগুর ও পাঙ্গাশ মাছ আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
আরো পড়ুনঃ পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়
পেট ফোলা রোগের প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশ পুকুরে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাছের খাদ্যের সাথে ফিসমিল ব্যবহার করা একান্তই অপরিহার্য। এ ছাড়া পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনসহ মাছকে নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
পাখনা বা লেজপচা রোগ চেনার উপায় কি
পাখনা বা লেজপচা রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক ভাবে পিঠের পাখনা এবং অন্যান্য পাখনাও আক্রান্ত হয়। কোনো কোনো মৎস্য বিজ্ঞানীর মতে, অ্যারোমোেনাডস ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। পানির ক্ষার স্বল্পতা ও পি-এইচ ঘাটতি দেখা দিলেও এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
পাখনা বা লেজপচা রোগে করণীয় কি
পাখনা বা লেজপচা রোগে করণীয় হল,০.৫ পিপিএম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩ থেকে ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। পুকুরে সাময়িকভাবে সার প্রয়োগ বাধ রাখতে হবে।
এ ছাড়া পাখনা বা লেজপচা রোগ-জীবাণু ধ্বংসের পর মজুদকৃত মাছের সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে হবে। এ অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ভিজিয়ে প্রয়োগ করা অতি জরুরি।
পুষ্টির অভাব জনিত রোগ কি
পুষ্টির অভাব জনিত রোগে পুকুরে চাষযোগ্য যে কোনো মাছই আক্রান্ত হতে পারে। আরো ভিটামিন এ.ডি এবং কে-এর অভাবে মাছ আধত্ব এবং হাড় বাঁকা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পুষ্টির অভাব জনিত রোগে মাছের খাবারে আমিষের ঘাটতি দেখা দিলেও মাছের স্বাভাবিক বর্ধন প্রক্রিয়া বিঘিাত হয়। অচিরেই মাছ নানা রোগের কবলে পড়ে। এসব রোগে আক্রান্ত মাছকে খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুনির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশিয়ে খাওয়ানো হলে যথা শিগগিরই মাছের শারীরিক সুস্থতা পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।
মাছকে সুস্থ সবল ও মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে ভিটামিন খাদ্য প্রদান করতে হবে। মাছের রোগ হওয়ার পর চিকিৎসার পরিবর্তে মাছের রোগ যাতে না হয়। কেননা, মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছের রোগ একটি বড় সমস্যা আমাদের প্রতিকার করতে জানতে হবে। যাতে মাছের পুষ্টির অভাব জনিত রোগ না হয়।
পোনা মজুদ, খাদ্য ও সার প্রয়োগ কি
প্রতি এক শতাংশে ১০-১৫ সে. মি. আকারের ৩০-৩২ টি বড় জাতীয় পোনা এবং ৫-৬ সে. মি. আকারের ৬০ টি মলা ও ৬০ টি পুটি মাছ মজুদ করা যায়। মাছের পোনা মজুদের পরদিন থেকে পোনার দেহের ওজনের শতকরা ৫-১০ ভাগ হারে মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি খাবার হিসেবে খৈল, কুড়া, ভূষি দেয়া যেতে পারে।গ্রাস কার্পের জন্য কলাপাতা, বাধা কপির পাতা, নেপিয়ার বা অন্যান্য নরম ঘাস দেয়া যেতে পারে। মলা-পুঁটি মাছের জন্য বাড়তি খাবার দরকার নাই। প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার ১০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৪-৬ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরি
মাছের সম্পূরক খাদ্য উৎপাদনের মূল উপকরণের মধ্যে রয়েছে, খৈল, কুঁড়া, শুটকি মাছের গুঁড়া, মিট এন্ড বোন উল্লেখযোগ্য।বিদেশে শুটকির উচ্চ দাম থাকার কারণে কম দামের মিট এন্ড বোন দিয়ে মৎস্য খাদ্য প্রস্তুত হয়।
মাছের খাদ্য তৈরির জন্য সচরাচর ব্যবহার যোগ্য উপাদান হল চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ফিশমিল, গরু-ছাগলের নাড়িভুঁড়ি, রেশম কীট এবং জলজ উদ্ভিদ যেমন, কচুরিপানা, খুদেপানা, কুটিপানা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, সুষম খাদ্য তৈরির জন্য সাধারণত মোট খাদ্যের ০.৫-২% ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ প্রয়োজন হয় এবং খাবার বেশি সময় স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বাইন্ডার হিসেবে আটা, ময়দা অথবা চিটাগুড়ের ব্যবহার অতীব জরুরি বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মতে,পুকুরে বিভিন্ন জাতীয় মাছের পুষ্টি চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদনের জন্য এ জাতীয় মাছের সম্পূরক খাদ্যে কমপক্ষে ৩৫% আমিষ থাকা বাঞ্ছনীয়।
মাছ আহরণ এর সময়
মাছ আহরণ এর সময় হলো পোনা মজুদের ২ মাস পর হতে ১৫ দিন পর পর বেড় জাল দিয়ে মলা-পুঁটি মাছ আংশিক আহরণ করতে হবে। ৮৫০-১০০০ গ্রাম থেকে বেশী ওজনের কাতল ও সিলভার কার্প মাছ আহরণ করে সমসংখ্যক ১২-১২ সে. মি. আকারের পোনা পুনরায় মজুদ করতে হবে। বছর শেষে চূড়ান্ত আহরণ করা যেতে পারে।
পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হবেন-শেষ কথা
উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায় সেই সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি মাছের বিভিন্ন রোগ জিবানু প্রতিকার ও খাবার এর তথ্য সম্বন্ধে।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার ভালো লেগেছে। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url