পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেই সফল হয়েছে । বাজারে পাঙ্গাস মাছের চাহিদা রয়েছে অনেক তাই পাঙ্গাস মাছ চাষ করে চাষিরা লাভবান হয়। যেভাবে পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায় বিস্তারিত জানুন।

পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

বর্তমানে সময়ে পরিবেশগত পরিবর্তনের কারনে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।আবার প্রাকৃতিক সাথে প্রজনন ক্ষেত্র গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবার জন্য পাঙ্গাস মাছের উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাস চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। বর্তমানে পুকুরে প্রচুর পরিমাণে পাঙ্গাস মাছ চাষাবাদ করা হয় সম্ভব হচ্ছে।

পাঙ্গাস মাছ চাষে আয়

আমাদের দেশে বহু মাছ ব্যবসায়ী আছে যারা প্রথমবারের মতো পাঙ্গাস মাছ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছে।আপনি যদি পাঙ্গাস মাছ চাষ করে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে চান তাহলে প্রথমে আপনাকে পাঙ্গাস মাছ কিভাবে চাষ করতে হয় অর্থাৎ পাঙ্গাস মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

বর্তমান সময়ে অনেক ব্যবসায়ী পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কোটিপতি হচ্ছে।কেননা এখনকার বাজারে পাঙ্গাস মাছের অনেক চাহিদা।এর জন্য দিন দিন পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষের চাহিদা বারছে।পাঙ্গাস মাছ দেশে ও বিদেশে বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করা সম্ভব।প্রতিবছর এমন ও ব্যবসায়ী আছে যারা শুধু পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে ইনকাম করেন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি।

পাঙ্গাস মাছের চাষ করা অনেক সহজ।কেননা অল্প পরিমান জমিতে অনেক মাছ চাষ করা যায় ।আর এখান থেকে ভালো পরিমানে অর্থ উপার্জন করতে হলে সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হবে।তাহলে আপনি শুধু পাঙ্গাস মাছ বিক্রি করে মাসে অনেক অর্ধ উপার্জন করতে পারবেন।

পাঙ্গাস মাছের বিভিন্ন প্রকার জাতঃ

পাঙ্গাস মাছ আমাদের জনপ্রিয় মাছ।এই মাছটি প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাস মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চ বিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল।

আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের পাঙ্গাস মাছ পাওয়া যায় । পাঙ্গাস মাছের জাতগুলোর মধ্যে দেশী পাঙ্গাস ও থাই পাঙ্গাস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

দেশী পাঙ্গাসঃ 

দেশী পাঙ্গাস মাছের গায়ের রং হালকা সোনালী, পিঠের দিকে কালচে ধরনের এবং পার্শ্ব রেখার দিকে ধূসর হয়ে থাকে। এ মাছের গায়ে  আঁশ থাকে না।বর্তমানে আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাঙ্গাস মাছ অনেক সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ পুকুরে মাছ চাষ করে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়

বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, বহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। এরা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন নদীসহ প্রধান নদীগুলোতে এর পোনা পাওয়া যায়। দেশি পাঙ্গাস মাছের সাইজ খুব একটা বড় হয় না।

থাই পাঙ্গাসঃ

থাই পাঙ্গাস মাছটি এক ধরনের বিদেশী মাছ । এ মাছের আদিবাস মূলত থাইল্যান্ডে এবং এর পাশ্ববর্তী অঞ্চলের দেশে।আর বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে বিদেশী এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে।

বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিক চাষ করার জন্য থাই পাঙ্গাস একটি জনপ্রিয় নাম। দেশী পাঙ্গস মাছের থেকে এ মাছ দ্রুত বড় হয়। এর এক একটি মাছ ওজনে সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ১৮ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। থাই পাঙ্গাস মাছ এদেশে পুকুরে চাষ করা অনেক লাভজনক।

পাঙ্গাস মাছ চাষের পদ্ধতিঃ

আমাদের দেশে পাঙ্গাস মাছ চাষের পদ্ধতিটি নির্ভর করে পুকুর বা জলাশয়ের বৈশিষ্ট্য এর উপর।যেমন, পরিবেশেগত অবস্থা, পানি নিয়ন্ত্রণ , সঞ্চয়, মানসম্মত পোনা প্রাপ্তি, বাজার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি । এই সব বিষয় গুলোকে মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চাষ পদ্ধতিটি কেমন হবে। আজকে আমরা জানব পাঙ্গাস মাছের একক চাষ ব চাষ সম্পর্কে।

পুকুর নির্বাচন করাঃ

পাঙ্গাস মাছ চাষে পুকুর নির্বাচন করতে হলে, পুকুরের দৈর্ঘ্য বেশি এবং প্রস্থ কম হতে হবে।পুকুরের তলা যেন সমতল হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।আর পুকুরের পানির গভীরতা ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত রাখা দরকার। পাঙ্গাস চাষের জন্য দোআঁশ মাটির পুকুর সবেচেয়ে ভাল। জরুরি প্রয়োজনে যাতে দ্রুত পানি দেয়া যায় সেজন্য পুকুরের কাছেই গভীর বা অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা রাখা দরকার।

আরো পড়ুনঃ হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়

পুকুর যেন বর্ষায় বা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে যাতে করে ভেঙ্গে বা ভেসে না যায় সেজন্য আগে থেকেই লক্ষ্য রাখতে হবে ও প্রয়োজনীয় মেরামত সেরে ফেলতে হবে। সর্বোপরি এমন জায়গায় পুকুরটি বেছে নিতে হবে যেখানে যোগাযোগের সুবিধা ভাল এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।এ ছাড়াও আর একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পুকুরের উপরে গাছপালার ছায়া না পরে পরিপূণ রোদ পায়।

পুকুর প্রস্তুত করতে হবেঃ

পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হলে পুকুর কোথায় হবে আগে স্থানটি নির্বাচন করতে হবে। তারপর  ভালো ভাবে পুকুর তৈরি করতে হবে যেন পুকুর আয়তকার হয়।আর পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থাকে তাহলে অবশ্যই চুনকাদার সাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।তাছাড়া পুকুরে যদি আগে কখনো অধিক ঘনত্বের মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তাহলে চুনের পাশাপাশি বেশ কিছু সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোনা নির্বাচন ও মজুদঃ

পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হলে প্রথমে পাঙ্গাস মাছের পোনা নির্বাচন ও মজুদ করতে হবে।আর যদি চান পাঙ্গাস মাছ মিশ্র পদ্ধতিতে চাষ করবেন তাহলে পাঙ্গাস মাছের সাথে অন্যান্য মাছের পোনাগুলো সংগ্রহ করতে হবে। মাছ চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালো মানের উপযুক্ত আকারের পোনা এর ওপর।

মাছের রোগ জীবাণুঃ

পাঙ্গাস মাছ চাষ করার জন্য বড় ধরনের বাধা হলো বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু। সাধারণত অনেক ধরনের রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছের হতে পারে। পাঙ্গাস মাছ লালচে দাগ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত এই রোগ হলে ত্বক ও পায়খানার গোড়ায় লালচে দাগ স্পট দেখা যায় এবং অনেক সময় মুখে ঘা হতে পারে।এছাড়া আরো বেশ কিছু রোগ রয়েছে যেগুলো পাঙ্গাস মাছ কে আক্রান্ত করে।

খাদ্য প্রয়োগ করাঃ

পাঙ্গাস মাছ চাষে পুকুরে যে খাবার তৈরি হয় তাতে মাছের ফলন ভাল হবে না। তাই ভাল মানের খাদ্য প্রয়োগ  করতে হবে। মনে রাখতে হবে চাষ পর্যায়ে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমান খাদ্য সরবরাহ না করতে পারলে পাঙ্গাসের উৎপাদন বাধাগ্রস্থ হবে। মাছের খাদ্যের পরিমান মাছের বয়স এবং দেহের ওজনের ওপর নির্ভর করে। ২০ দিন পর পর নমুনা হিসেবে কয়েকটি মাছের ওজন পরীক্ষা করে দেখতে হবে মাছ ঠিক মতো বাড়ছে কি না ।

মাছ সংগ্রহ করাঃ

বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাছ মজুদের ৬-৭ মাস পর যখন পাঙ্গাসের গড় ওজন ৯০০ থেকে ১২০০ গ্রাম হয়, তখনই মজুদকৃত মাছের ৫০% বাজারে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে করে অবশিষ্ট মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়।

পাঙ্গাস মাছ চাষ করে কী ভাবে লাভবান হওয়া যায়-শেষ কথাঃ 

উপরিক্ত আটিকেল থেকে জানতে পারলাম। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারিপারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে মাছের চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সারা দেশের প্রায় আড়াই লক্ষ হেক্টর পুকুর, দীঘি ইত্যাদিসহ প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ হেক্টর জলাশয়ে পরিকল্পিতভাবে পাঙ্গাস মাছের চাষ করলে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুব ও যুব মহিলাদের। প্রায় হারিয়ে যাওয়া আমাদের ঐতিহ্য ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’-কে পুনরুদ্ধার করতে তাই পাঙ্গাস মাছের চাষ একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url