কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করছেন। তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন । কেননা এ আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করেছি কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। সাথে আর বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল ও কবে উদ্ভবন করা হয় সে সম্পর্কে।

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।কেননা এ আর্টিকেলটি মধ্যে কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি পড়লে কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে না জানলে আশা করি অনেক উপকৃত হবেন। আশা করি কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধু টানেলঃ

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে অবস্থিত একটি সড়ক সুড়ঙ্গ।এটি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুড়ঙ্গটির উদ্বোধন করেন। এই সুড়ঙ্গটি চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে গিয়ে নদীর অপর প্রান্তে পৌঁছে নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করেছে।

এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এই টানেল বাংলাদেশের সর্ব প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ পথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গের নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে সুড়ঙ্গটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত।

বঙ্গবন্ধু টানেল ইতিহাসঃ

বঙ্গবন্ধু টানেল ইতিহাস বলতে টানেল সকল তথ্য নিয়ে আলচনা করাকে বোঝায়।বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠায় এ টানেল এর নাম কর্ণফুলী টানেল নাম করন করা হয়।এটি মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়।সেতু কর্তৃপক্ষের ধারণা অনুযায়ী,২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

আরো পড়ুনঃ  কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ার পর ২৮ অক্টোবর রোজ শনিবার ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের সংশোধিত বাজেটে, প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এছাড়া, নির্মাণ ব্যয়ও ১৬৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়।

বঙ্গবন্ধু টানেল অর্থায়নঃ

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ধারণা অনুযায়ী, সুড়ঙ্গ নির্মাণে ব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এর ঢাকা সফরে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণঃ

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মতে, নদীর নিচের সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ করে চীনা কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সুড়ঙ্গের বিভিন্ন অংশ চীনের ঝেনজিয়াংয়ে উৎপাদন করে বাংলাদেশে আনা হয়। ২০২২ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল। টানেলের প্রতি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট। এছাড়া, দুটি টিউবের মধ্যবর্তী ব্যবধান ১১ মিটার।সুড়ঙ্গটির মূল দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। তবে এর সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের সংযোগ সড়ক যুক্ত।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয়ঃ

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ধারণা অনুযায়ী,বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা দেয় বাংলাদেশ সরকার।

বঙ্গবন্ধু টানেল টোলঃ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে- 

 বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল হারঃ

যানবাহনের ধরন 

  টোল হার

মাইক্রোবাস 

 ২৫০

ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পিক আপ ট্রাক

 ২০০

বাস (৩২ আসন বা তার অধিক)  

 ৪০০

বাস ( ৩১ আসন) 

৩০০

বড় বাস (ত্রিএক্সএল)

৫০০

ফোরএক্সএল ট্রেলার

১০০০

ত্রিএক্সএল ট্রেলার

৮০০

ট্রাক (১১ টন)  

৬০০

ট্রাক (৮ টন পর্যন্ত) 

৫০০

ট্রাক (৮ টন অধিক)

৬০০

ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত)

৪০০

এক্সএল প্রতি অতিরিক্ত চার্জ

২০০

বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনঃ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর শনিবার কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন করেন।মূলত বাংলাদেশ সরকার এটির নামকরণ করেছে বঙ্গবন্ধু টানেল। দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন চলাচলকারী প্রথম টানেল।বাংলাদেশ সরকারের মেগাপ্রকল্প গুলোর মধ্যে এটি একটি।যেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আগে উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু টানেলে গাড়ি চলাচল শুরুঃ

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করেন। কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করার পর থেকে টানেল এর মধ্য দিয়ে যান চলাচল বা গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করার পর ২৯ অক্টোবর সকাল থেকেগাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে।  উদ্বোধনের পর থেকে কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে গত এক মাসে গাড়ি চলাচল করেছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৭১টি। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে গাড়ি চলেছে ৫ হাজার ৮২৯টি।বঙ্গবন্ধু টানেলের জন্য গাড়ি নদীর এপার থেকে ওপার হতে পারছে।

গাড়ি হতে টোল বাবদ আয়ঃ

আমরা জানি কর্ণফুলী টানেলের টোল ম্যানেজার মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, গাড়ি থেকে টোল বাবদ আয় হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ টাকা। তিনি বুধবার ২৯ নভেম্বর সকালে এ তথ্য জানান । তিনি বলেন, ২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।বুধবার (২৮ নভেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত এক মাসে এক লাখ ৭৪ হাজার ৮৭১টি গাড়ি চলাচল করেছে।এই সময়ে টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা।সে অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয় ১৩ লাখ ৭১ হাজার ২৭৪ টাকা।সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ২০২৩ সালের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানেল চালুর বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করার কথা ছিল। চালুর বছর ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩৯ লাখ গাড়ি চলবে বলেও আভাস দেওয়া হয়, যার ৫০ শতাংশ হবে পণ্যবাহী গাড়ি।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ফলে সুবিধাঃ

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে,চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার 'আধুনিকায়ন' করতে এই প্রকল্প করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বদিকের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়নের দিক যেমন আছে, তেমন পশ্চিম দিকের শহর, বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলছে সেতু বিভাগ।মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়। 

  • চট্টগ্রাম শহর শিল্পায়ন ত্বরান্বিতও বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • শিল্পায়নের দিক ছাড়াও পর্যটন শিল্পের বিকাশিত হবে।
  • চট্টগ্রাম থেকে আনোয়ারার তুলনামূলক ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
  • ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এর মধ্যে নতুন সড়ক যোগাযোগের কাজে আসবে এই টানেল। বিদ্যমান কর্ণফুলী নদীর উপরের দুই সেতুতে চাপ কমাতেও সাহায্য করবে এই টানেল।
  • বর্তমান কোরিয়ান ইপিজেডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের যাতায়াতের তুলনামূলক সুবিধাজনক রুট হবে এই টানেল।
  • ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ৫০ কিলো মিটারের মতো দূরত্ব কমবে এবং সময় বাঁচবে এক ঘণ্টার মত।
  • ভবিষ্যতে এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগ স্থাপন হবে টানেলের মধ্য দিয়ে।
  • চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে “ওয়ান সিটি টু টাউন”বা “এক নগর দুই শহর” এর মডেলে গড়ে তোলা।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর পর শহরের সম্প্রসারণ এবং বিদ্যমান শিল্প নগরীর আরও হবে।
  • ঢাকা-কক্সবাজার রুটেও চলতে থাকে তাহলে বিভিন্ন জায়গায় ‘বটলনেক’ থাকবে যেখানে যানবাহনের গতি কমে যাবে।
  • ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কোন ধরণের গাড়ি চালালে অল্প জায়গায়, অল্প সময়ে সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
  • ঢাকা-কক্সবাজারের সড়ক দূরত্ব কমা ছাড়া বড় কোনো বাণিজ্যিক সুবিধা হবে।

কর্ণফুলী টানেল-শেষ কথাঃ

উপরে উক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সে সম্বন্ধে। সাথে আরো আলোচনা করেছি কর্ণফুলী টানেল টোল ও গাড়ি চলাচল এর বিভিন্ন তথ্য সম্বন্ধে।আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং আপনার অনেক ভালো লেগেছে।

কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পর্কে আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কোন কোন বিষয় গুলি ভালো লেগেছে এবং আপনি কত টুকু উপকৃত হয়েছেন তা আপনার নিকটস্থ বন্ধুদের সাথে অবশ্যই শেয়ার করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল প্রতি দিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url